Sunday, August 17, 2008

ব্যাঙ্গালোর থেকে একদিনের ট্যুর :



এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবার সময় অনেক কমে গেছে। এখন আর ২০-২২দিনের ট্যুরের কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তবুও পুরো সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর সপ্তাহান্তে আমাদের মনে হয় কোথাও ঘুরে আসলে বেশ হয়।

ব্যাঙ্গালোর থেকে একদিনের ট্যুরে যাওয়ার মতো অনেকগুলো জায়গা রয়েছে। মাইসোর, তিরুপতি, ও শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত এই তিনটি জায়গা আমরা অনায়াসে এক একটি সপ্তাহান্তে ঘুরে আসতে পারি। কিভাবে যেতে হবে তার সম্পর্কে যদি একটা ধারণা আগে থেকেই থাকে, তবে আমাদের সকলেরই একটু সুবিধা হয়। এই সংখ্যায় আমি আপনাদের সেরকম কিছু জায়গার তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।


মাইসোর :-
মাইসোর শহরটি আমাদের সকলের কাছেই বেশ পরিচিত। মাইসোরের নাম শুনলেই প্রথম যার নাম মনে পরে তিনি হলেন টিপু সুলতান। ব্যাঙ্গালোর থেকে মাইসোরের দূরত্ব ১৩৬ কিমি। মাইসোর এ যা যা দেখার আছে তা হল মাইসোর প্যালেস, বৃন্দাবন গার্ডেন, চামুন্ডা পাহাড় ও টিপুর রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনম।

কখন ও কীভাবে যাবেন: প্রথমে ব্যাঙ্গালোর থেকে মাইসোর, বাসে চলে যেতে পারেন । তারপর ওখানে গিয়ে ঘোরার আয়োজন করা যায়। বাস স্ট্যান্ড-এই অনেক এজেন্ট পেয়ে যাবেন। যারা ঘোরানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। তবে খুব ভালো হয় যদি আপনারা একটা গাড়ী ভাড়া করে চলে যান। আর রবিবার দেখে গেলে খুব ভালো হয়। কারণ, রবিবার ও জাতীয় ছুটির দিনেই একমাএ প্যালেসের সমস্ত লাইট সন্ধ্যে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত জনসাধারনের জন্য জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

গাড়ী নিয়ে গেলে সকাল ৯টার মধ্যে ব্যাঙ্গালোর থেকে বেড়িয়ে গেলে ১ টার মধ্যে মাইসোর পৌঁছে যাবেন । যাওয়ার পথেই শ্রীরঙ্গপত্তনম পড়বে, তাই ওটা তখনই ঘুরে নেওয়া ভালো। যদি সময় কম থাকে না ঘুরতেও পারেন, কারণ ওখানে ইংরেজরা সব ধ্বংস করে দিয়েছে, তাই ধ্বংসস্তুপ ছাড়া তেমন কিছু দেখার নেই। তারপর মাইসোর এ পৌঁছে কোথাও দ্বিপ্রাহরিক আহার সেরে চামুন্ডা পাহাড় এ চলে যেতে পারেন। ওখান থেকে পুরো শহরটা দেখা যায়। চামুন্ডা পাহাড়ে চামু্ন্ডা দেবীর মন্দির আছে। ওখান থেকে মাইসোর প্যালেস চলে যেতে পারেন। এরপরের দেখার জায়গা বৃন্দাবন গার্ডেন।সেখানে আছে কৃষ্ণসাগর ড্যাম্প। আর সন্ধে ৭টা থেকে ৭.১৫ একটা fountain show হয়। যদি ওটা দেখতে চান, তাহলে প্যালেসের লাইট নিভে যেতে পারে । তাই যদি প্যালেসের লাইট দেখে বৃন্দাবন গার্ডেনে যাওয়া যায় তাহলে ভালো হয়। আর একটি fountain show সন্ধ্যে ৭.৩০টা থেকে ৭.৪৫ পর্য্যন্ত হয়। তারপর ৮টায় মাইসোর থেকে বেড়িয়ে রাত ১১ টার মধ্যে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে যাবেন ।

খরচ হবে কেমন: বাস ভাড়া: জনপ্রতি ৪০০ টাকা (এ.সি ভলভো) (যাতায়াত) ও জনপ্রতি ১৫০ টাকা (নন এ.সি ভলভো) (যাতায়াত) খরচ হবে। মাইসোরে ঘোরার প্যাকেজ জনপ্রতি১০০ থেকে ২০০টাকা (প্রবেশ মূল্য ব্যতীত) গাড়ী করে গেলে ছোট গাড়ী কিমি পিছু ৬টাকা (নন এ.সি) ও কিমি পিছু ৭ টাকা (এ.সি)। আর ড্রাইভারের ২০০ টাকা।
তাই সব মিলিয়ে গাড়ী করে গেলে ২২০০ (নন এ.সি) ও ২৫০০ (এ.সি) টাকা খরচ হবে ।

মাইসোর প্যালেসে প্রবেশ মূল্য: জনপ্রতি ১৫ টাকা। ক্যামেরা জমা রখতে হয়, তার জন্য ক্যামেরা পিছু ৫ টাকা।
বৃন্দাবন গার্ডেনের প্রবেশ মূল্য: জনপ্রতি ১৫ টাকা। ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে দেয় কিন্তু স্টীল ক্যামেরার জন্য ৫০ টাকা ও ভিডিও ক্যামেরার জন্য ১০০ টাকা মুল্য নির্ধারিত।

তাহলে আর দেরী কেন? বেড়িয়ে পড়ুন আজই।


তিরুপতি বালাজী মন্দির: ব্যাঙ্গালোর থেকে তিরুপতির দূরত্ব ২৫০ কিমির মতো। তিরুপতি বালাজী বিগ্রহ ভারতবর্ষের জাগ্রত বিগ্রহের মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন প্রায় কয়েক লাখ মানুষ তাদের মনষ্কামনা জানাতে এখানে আসেন। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিয়ে বিগ্রহ দর্শনের সুযোগ পাওয়া যায়।

কীভাবে ও কখন যাবেন: তিরুপতি যাওয়ার সবথেকে ভালো উপায় হলো প্যাকেজ ট্যুর।প্যাকেজ ট্যুর এ গেলে ওদেরই দায়িত্ব থাকে বিগ্রহ দর্শন করানোর। শনিবার যদি যেতে চান তাহলে অন্তত ১ সপ্তাহ আগে ট্রাভেল এজেন্সী বুকিং করে ফেলতে হয়। সাধারণতঃ শনিবার রাত ৮টায় ব্যাঙ্গালোর থেকে বাস ছাড়ে আর সকালে তিরুপতি(তিরুমালা)পৌঁছে যায়। ওখানে ওরাই বিশ্রাম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য রুম দিয়ে থাকেন এবং প্রাতঃরাশের ব্যবস্থা করেন। তারপর মন্দির দর্শনের জন্য নিয়ে যান, এখানে প্রায় ৫-৬ঘন্টা লেগে যায় মন্দির দর্শনের জন্য। তারপর ব্যাঙ্গালোরে ফিরে আসে সন্ধ্যে ৭টা মধ্যে। গাড়ী করে গেলে শনিবার সকালে বেড়িয়ে যাবেন। সোজা তিরুমালা গিয়ে পরের দিনের মন্দির দর্শনের টিকিট কেটে নেবেন। তারপর তিরুপতিতে থেকে সেদিন রাতটা কাটিয়ে পরের দিন বিগ্রহ দর্শন করে দুপুর ২টোর মধ্যে ব্যাঙ্গালোর ফিরে আসতে পারেন।

খরচ পড়বে: প্যাকেজ ট্যুর: জনপ্রতি ৭০০ টাকা ( নন এ.সি ভলভো), ও ৯০০ থেকে ১০০০টাকা (এ.সি)। প্রাতঃরাশ ও মধ্যাহৃভোজসহ। গাড়ীতে গেলে: কিমি পিছু ৬টাকা (নন এ.সি) ও ৭ টাকা (এ.সি)। হোটেল খরচ ৬০০ থেকে ১০০০।আর বিগ্রহ দেখার টিকিট মূল্য ৫০, ১০০, ৪০০, ৫০০, ৭০০টাকা।

যদি ভালোভাবে মন্দির দর্শন করতে চান তাহলে বলব সপ্তাহান্তে না গিয়ে সপ্তাহের মাঝে যাওয়া ভালো।



শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত: ব্যাঙ্গালোর থেকে ১২৫ কিমি দূরেই রয়েছে কাবেরী নদীর ওপর অবস্থিত শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত।বর্ষায় এই জলপ্রপাতের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। একদিনের ছুটিতে এইরকম জায়গার বিকল্প হতে পারে না ।

কীভাবে ও কখন যাবেন: যেকোন জলপ্রপাতেই বর্ষাকালে যাওয়া উচিৎ, কারণ বর্ষাকালেই দেখা যায় জলপ্রপাতের আসল রূপ। তাই শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো জুলাই এর শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্য্যন্ত।

ব্যাঙ্গালোর থেকে সকালে বেড়িয়ে সন্ধ্যার মধ্যে আবার ফিরে আসা যায়। গাড়ী নিয়ে সকাল ৮ টায় বেড়োলে ১১টার মধ্যে ওখানে পৌঁছানো যাবে।ওখানে কাছাকাছি দুটো জলপ্রপাত আছে ১০কিমি ব্যবধানে বারাচুক্কি ও গগনাচুক্কি। এখানে গেলে বাড়ী থেকে খাবার নিয়ে যাওয়ায় ভালো কারণ ওখানে মধ্যাহ্নভোজন এর কোনো ব্যবস্থা নেই। গগণাচুক্কি দেখে তারপর বারাচুক্কি যাওয়া ভালো। বারাচুক্কিতে জলপ্রপাতের একদম নীচ পর্য্যন্ত যাওয়া যায়। তাই ওখানে গিয়ে খাবার নিয়ে নীচে নেমে যাবেন। নীচে বোটিং এর’ও ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি জলপ্রপাতে স্নান করতে চান তাও করতে পারেন। নামার সময় যতটা তাড়াতাড়ি নামা গেছিলো ওঠার সময় বেশ কষ্ট হতে পারে, তাই আস্তে আস্তে বিশ্রাম নিয়ে ওঠাই ভালো।

বারাচুক্কি থেকে ৪০ কিমি দূরত্বে তালকাদ নামে আর একটি জায়গা আছে। সেখানেও যেতে পারেন। জায়গাটি নদীর তীরে অবস্থিত ও এখানে পাথরের কাজের মন্দির গুলো অতুলনীয় । এসব দেখে এবার বাড়ী ফেরার পালা। সারাদিন সমস্ত কিছু দেখে সন্ধ্যের মধ্যেই ব্যাঙ্গালোর ফিরে আসতে পারবেন।

নীচের স্লাইড শো'তে কিছু ছবি দেওয়া হল:

Photobucket

ছবি সৌজন্য: ইন্টারনেট ও অর্পিতা






লেখিকা : অর্পিতা পান্ডা(রায়)
১২ই জুলাই, ২০০৮
ব্যাঙ্গালোর, ইন্ডিয়া।

Saturday, August 16, 2008

গরুমারা জঙ্গল :



গতবছর হঠাৎ আমার কর্তা এসে বলল যে প্রত্যেক বছর পুজোয় তো কলকাতাতে থাকি, এই বছর একটু অন্যরকম ভাবে কাটালে কেমন হয়! যেই না বলা, ওমনি আমার সামনে ভেসে উঠল আবার জঙ্গল-পাহাড়ের মন কাড়ানো চেনা ছবি । ব্যাস শুরু হয়ে গেল তোড়জোড়। প্রথমত কোথায় যাব আর দ্বিতীয়ত কবে যাব? ঠিক হল দশমীর রাত্রে বেড়োনো হবে, আর জায়গা ঠিক হল খুব কাছেই উত্তরবঙ্গ। আমার বড় প্রিয় জায়গা গরুমারা’র জঙ্গল।

পুজোর নবমী কেটে যেতেই মনের মধ্যে দশমীর বেদনার সুর না বেজে, বাজলো মাদলের বোল। রাত্রি ১০.০৫ এর দার্জিলিং মেল এ চড়ে বসলাম। আমরা দলে ছিলাম ৭ জন। পরদিন সকালে পৌঁছালাম নিউ জলপাইগুঁড়ি স্টেশনে। সেখানে বিষ্ণু (আমাদের চেনা লোকাল ড্রাইভার) আমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। স্টেশন ছেড়ে জলপাইগুঁড়ি শহর ছাড়িয়ে মালবাজার পেরিয়ে চললাম। দুপাশে মাইলের পর মাইল ফাঁকা। ঘন্টা দেড়েক চলার পর জঙ্গলের দেখা মিলল। বেলা ১০ টা নাগাদ আমরা গিয়ে পৌঁছালাম ডবলিউ.বি.এফ.টি.ডি.সি(W.B.F.T.D.C)’র বাংলো বনানী’তে। দেখতে অপূর্ব বাংলো’টি প্রত্যেকটি ঘর এক একটি নদীর নামে। তিস্তা, মুর্তি, তাপ্তি, তোর্সা, সুপ্তি, জলঢাকা –এইরকম। অনেকক্ষণ ধরে একটা জলের বয়ে চলার আওয়াজ আমাদের কানে আসছিল,কিন্তু কোথা থেকে তা বুঝতে না পারায় ওখানকার ম্যানেজার মিস্টার চক্রবর্ত্তী’কে জিজ্ঞাসা করলাম। উনি একটু হেসে বললেন “গিয়েই দেখুন না..”আমরা অত্যন্ত কৌতুহলের সঙ্গে বারান্দায় দাঁড়াতেই অপূর্ব দৃশ্য। প্রবহমান মুর্তি তার নিজের গতিতে বয়ে চলেছে। তার একপাশে আমাদের বাংলো আর একপাশে গরুমারা’র জঙ্গল। কেউ আর বেশী অপেক্ষা না করে কোনরকমে পোশাক বদলে চললাম জলের উদ্দেশ্যে। বাংলো থেকে বাগান পেরিয়ে একটা পাথুরে রাস্তা, সেটাই চলে গিয়েছে সোজা নদীর দিকে। জলের গভীরতা বেশী না হলেও সকালে বৃষ্টি হওয়ার জন্য নদী’তে স্রোত ছিল ভালোই। প্রায় ২ঘন্টা সেখানে কাটালাম, জল ছেড়ে উঠতে কারোর-ই ভালো লাগছিলো না। সমুদ্রে স্নান করার অভিজ্ঞতা কম বেশী সবার’ই আছে, কিন্তু পাহাড়ী নদীতে কখন’ই ছিলো না।

দুপুরে সবাই খুব পরিশ্রান্ত থাকায় একটু বিশ্রামের পর বিকাল ৪’টের সময় গেলাম ‘যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচ্ টাওয়ার’। অনুমতি (permit)আগে থেকেই বাংলোর ম্যানেজার করে রেখেছিলেন। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে শুনলাম নানা রকমের ঝিঁঝিঁ’র ডাক,কোনটা চেনা আবার কোনটা অচেনা। হঠাৎ পুজোর ঘন্টার মতো একটা আওয়াজ শুনে গাইড’কে জিজ্ঞেস করায় সে বলল যে ওটা নাকি একরকমের ঝিঁঝিঁ পোকা। অবশেষে ওয়াচ্ টাওয়ার এ পৌঁছালাম । ওখানে বসার বন্দোবস্ত ছিল। দূরে দেখলাম একটা জায়গায় একটা ছোট জলাশায়, সেখানে জলের মধ্যে নুন দেওয়া,বন্য জন্তুরা ওখানে নুন খেতে আসে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করার র বেশ কিছু বাইসন, প্রচুর ময়ূর, গন্ডার, শিং-ওয়ালা হরিণ দেখলাম। রাত্রে বাংলোর পাশে খোলা আকাশের নীচে আগুন জ্বেলে অধিবাসীদের নাচ দেখলাম। সে এক দারুন অভিজ্ঞতা। মনে হল যেন সত্যি কোনো অধিবাসী’দের গ্রামে বসে আছি।

পরের দিন রওনা হলাম ঝালং-বিন্দুর উদ্দেশ্যে। এখানে রাস্তার একপাশে পাহাড় আর একপাশে নদী। জলঢাকা নদী প্রায় অর্ধেক রাস্তা আমাদের সাথে চলল। অবশেষে পৌঁছালাম বিন্দুতে। এটাই পশ্চিমবঙ্গের শেষ সীমানা, তাই এর নাম বিন্দু। একদিকে ইন্ডিয়া আর একদিকে ভুটান। জলঢাকা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি এখানেই। জলঢাকা নদীতে বাঁধ দিয়ে এটি তৈরী করা হয়েছে, সে এক বিরাট ব্যাপার। বাঁধের জল ছাড়া দেখার মতো। প্রায় ১০০ফুট ওপরেও জল এসে আমাদের গায়ে ছিটছে। এখানে বর্ডার বলে নিরাপত্তার বেশ কড়াকড়ি, ছবি তোলাও নিষেধ। ভুটানের পাহাড়ের দিকে পায়ে পায়ে বেশ কিছুদূর এগিয়েও ফিরে আসতে হলো নিরাপত্তার জন্য। এখানে তিনটে নদী এসে মিলেছে জলঢাকা, বিন্দু ও কেদো । জলঢাকার জল স্বচ্ছ, বিন্দুর জল সবুজ, আর কেদোর জল ঘোলা। অদ্ভুত ব্যাপার হল নদী ৩টে এক সাথে মিললেও তাদের’কে আলাদা আলাদা করে চেনা যায়।

ফিরে এলাম দুপুরে। ম্যানেজারের সাথে কথা বলে রাত্রে জঙ্গল দেখার ব্যবস্থা করা হলো, যা নিয়মের বাইরে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা ছাড়া খুব কষ্টকর। রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর আমরা বেড়োলাম গাইড’কে সাথে নিয়ে। সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, ঘন জঙ্গল, শুধু গাড়ীর আলো ছাড়া চারিদিকে চাঁদের আলো। নানারকম পাখির ডাক। মনের মধ্যে যে ভয়ও করছিলো না, এ কথা বলব না, কিন্তু সব কিছু’কে ছাপিয়ে চারিদিকে তখন শুধু জঙ্গলের গন্ধ। ঘন্টা দেড়েক এভাবে ঘুরলাম, ফেরারও ইচ্ছে ছিলো না, তাও ফিরতে হলো। পরদিন ফিরে আসার পালা।

সকালে উঠে পায়ে হেঁটে সবাই মিলে বেশ কিছুটা ঘুরে এলাম। মন সবার’ই খুব খারাপ। সবুজ ছেড়ে আবার সেই ধুলো, ধোঁয়া’র মধ্যে ফিরে যেতে হবে বলে, কিন্তু নিরুপায়। তাই আবার আসার প্রতিক্ষা নিয়ে দার্জিলিং মেল এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।





লেখিকা : সোমা ব্যানার্জী
৩১শে জুলাই, ২০০৮
কোলকাতা, ইন্ডিয়া

Friday, August 15, 2008

গণপতিপুলে, সি-বীচ, মহারাষ্ট্র

গণপতিপুলে কোঙ্কন উপকূলের অন্যতম আকর্ষনীয় সি-বীচ। নিরিবিলি পরিবেশ, দু-দিনের জন্য ছুটি কাটিয়ে আসার পক্ষে, পছন্দের তালিকায় প্রথমদিকে থাকবে গণপতিপুলে! আশে-পাশে ছড়িয়ে আছে পশ্চিমঘাট পর্বতের অংশ বিশেষ,
আর একদিকে পরিস্কার সোনালী বেলাভূমি ও নাতি-উগ্র্র আবরসাগর। মুম্বাই -এর আশে-পাশে যে সব বীচে গেছি তার সাথে এর কোনো তুলনাই চলে না। বরং গোয়ার সাথে অনেক মিল আছে গণপতিপুলে-এর।


বীচ ঘেঁষেই রয়েছে স্বয়ম্ভু গণপতি মন্দির। এখানকার দেবতাকে ‘পশ্চিমা প্রহরী দেবতা’ বা Western Sentinel God বলে। গণপতি উৎসবের সময় (Aug-Sept) তো বটেই, সারা বছরই দেব-দর্শনে মহারাষ্ট্র্র, গুজরাট থেকে লোক আসে। বীচ ঘুরে, সমুদ্র-স্নান করে relax করার পরেও যদি কেউ মহারাষ্ট্রর গ্রামের সৌন্দর্য্য দেখতে আগ্রহী হও, তারা বেড়িয়ে আসতে পারো 1 km -এর মধ্যেই মালগুন্দ (Malgund) ও ভেলণেশ্বর (Velneshwar) গ্রামে। ভেলণেশ্বর গ্রামে পুরোনো শিব মন্দিরে মহাশিবরত্রি উপলক্ষে বড় মেলা হয়।

গণপতিপুলে থেকে 25 km দূরে রত্নগিরি শহর। এই রাস্তাটা ভারি মনোরম। একদিকে পাহাড়, একদিকে সমুদ্র, মাঝে মাঝে জেলেদের গ্রাম। মেছো গন্ধ, কোথাও কোথাও জাল শুকোতে দেওয়া হয়েছে, জেলেদের নৌকো বাঁধা।

মহারাষ্ট্র মানেই মারাঠা বীরদের গৌরব গাঁথা আর কেল্লা। ঘুরে আসতে পারো 35km দূরে জয়গড় কেল্লায়। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে কেল্লার গায়ে। গ্র্রীষ্মকাল (April-June) বাদ বাকী যে কোনো সময় যাওয়া যেতে পারে।


কিভাবে যেতে হয় :

কলকাতা থেকে যারা আসবে:-
গণপতিপুলে যেতে হলে আগে পৌঁছতে হবে মুম্বাইতে। মুম্বাই থেকে এর দূরত্ব 375 km. প্রতিদিন রাতে মুম্বাই-এর বিভিন্ন প্রান্ত (দাদর-আন্ধেরি-বোরিভিলি-চেম্বুর-ভাসি) থেকে AC / Non AC bus ছাড়ছে রত্নগিরি- র উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে গাড়ী/ ট্রেকার/ State Transport -এর বাস পাওয়া যায়। এছাড়া । মুম্বাই থেকে গাড়ী ভাড়া করেও যাওয়া যায়। ট্রেনে গেলে কোঙ্কণ রেলওয়ে ধরে V.T (Mumbai CST) থেকে রত্নগিরি যেতে হবে। নিকটবর্তী airport কোলাপুর, Air Decaan-এর বিমান আছে।


কোথায় থাকবে:

থাকার ব্যাপারে আমি suggest করব গণপতিপুলে সি-বীচ-এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই MAHARASHTRA TOURISM DEVELOPMENT CORPORATION /MTDC Holiday Resort-এ থাকা উচিৎ। Resort টি একদম বীচের ওপর । খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্হাও ভালো। তবে এখানে থাকতে হলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো। কোঙ্কণী হাট (Konkani Hut) গুলি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। অন্তত এক-দেড় মাস আগে বুকিং করা ভালো। Online বুকিং হয়।

এদের website হল : http://www.maharashtratourism.gov.in/
দূরভাষ : 91-22-2202 6713/ 7762/ 4627
এছাড়াও আরো কিছু হোটেল আছে । তবে বীচ থেকে একটু দূরে।





লেখিকা : মৌমিতা চৌধুরী
১০ই জুলাই, ২০০৮
মুম্বই, ইন্ডিয়া।

Thursday, August 14, 2008

আল্পস্ পাহাড়ের শামোনি ভ্যালি :



শামোনি (Chamonix) ভ্যালি : এবার আমাদের গন্তব্য স্থল হল শামোনি ভ্যালি। ইটালি আর সুইজারল্যান্ডের বর্ডার ঘেঁষে ফ্রান্সের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত এই উপত্যকা। এটি ফ্রেঞ্চ আল্পসের মঁ ব্লাঁ ( Mont. Blanc ) অঞ্চলের একটি বিশাল, সমৃদ্ধ ও বর্ধিষ্নু উপত্যকা। এই জায়গাটিকে তাই অনেক সময় শামোনি মঁ ব্লাঁ বলা হয়।

শামোনি যাবার জন্য প্রথমে আকাশ পথে উড়ে যেতে হল প্যারিস থেকে জেনেভা। ট্রেনে চেপেও যাওয়া যেত, কিন্তু প্যারিস থেকে ট্রেন জার্নি ভীষন ক্লান্তিকর আর সময় সাপেক্ষ শুনেছিলাম। তাই আমরা ফ্লাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্লেনে যদিও এক ঘন্টা সময় লাগার কথা, কিন্তু আগে পরের চেক ইন, চেক আউট সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় ৪ ঘন্টা লেগে গেল জেনেভা পৌঁছাতে। জেনেভা পৌছালাম প্রায় সকাল ১০ টায়। এর পর সেখান থেকে বাসে করে ( এটা একটা শেয়ার্ড বাস, হোটেল থেকেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, প্রাইভেট ট্যাক্সি বা বাসও পাওয়া যায়, কিন্তু তাতে খরচা অনেক বেশি।) ১ ঘন্টা জার্নি করতে হল শামোনি পৌছতে। পুরো রাস্তাটাই সবুজ পাহাড়ে ঘেরা, আর সুন্দর সাজানো সব ঘর বাড়ি। মাঝে মাঝে খরস্রোতা নদীর জলের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, আর তার দেখাও মিলছিল, যদিও সে নদীর জল তিস্তার মতো নীল আর স্বচ্ছ নয়, একটু ঘোলাটে। তবুও বার বার মনে হচ্ছিল আমার অতি চেনা শহর শিলিগুড়ি থেকে সেভক বা মিরিক জার্নির কথা। পাহাড়ি রাস্তা আমার ভীষন ভাল লাগে। তবে আমার মনে হল আমাদের পাহাড়ের রাস্তাগুলো অনেক বেশি সুন্দর আর ভয়ঙ্কর। এই জায়গাটা সুন্দর ঠিকই, কিন্তু ভয়টা ছিল না। রাস্তা অনেকটা চওড়া, আর দুই দিকের পাহাড়ে বড় বড় তারের জালি দিয়ে পাহাড়কে যেন বেধেঁ রাখা হয়েছে।

শামোনি পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের প্রায় ১১ টার বেশি হয়ে গেল। তারপর হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে প্রায় ১২টা। সেদিন এত ক্লান্ত ছিলাম যে ট্যুরিষ্ট অফিস থেকে সমস্ত ইনফরমেশন সংগ্রহ করে শামোনি ভ্যালিতেই শুধু ঘুরে বেড়ালাম।

পরদিন দেরি না করে সকাল সকাল বেরিয়ে পরলাম আগুই দি মিদি(Aiguille Du Midi) র উদ্দেশ্যে। ফ্রেঞ্চ আল্পস্ এর বিশাল এক অঞ্চল হলো মঁ ব্লা। এই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু পর্বত শৃঙ্গের নাম ও মঁ ব্লা (উচ্চতা ৪৮১০ মি)। অপেক্ষাকৃত ছোট একটা পর্বত শৃঙ্গ হল আগুই দি মিদি (উচ্চতা ৩৮৪২ মি)। প্রসঙ্গতঃ, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ সান্দাক্ফুর উচ্চতা ৩৬৩৬ মি। মজাটা হল যে কোনো রকম ট্রেকিং না করেই পৌছনো যায় আগুই দি মিদি পর্বত শৃঙ্গের চূড়ায়। কেবল কারে করে। এই পর্বত শৃঙ্গ সম্পর্কে বলার আগে আমার মনে হয় এই কেবল কার সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। এই কেবল কার টি তৈরি হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। পৃথিবীর অন্যান্য কেবল কারের চেয়ে, এই কেবল কারটিই পাহাড়ে ওঠবার জন্যে ভার্টিকালি সর্বোচ্চ উচ্চতা অতিক্রম করে।


শামোনি ভ্যালি থেকে শুরু করে প্রথম দফায় কেবল কার টি নিয়ে যাবে প্ল্যান দু আগুই দি মিদিতে। এটা একটা সমতল জায়গা (উচ্চতা ২৩১৭ মি)। সবুজ পাহাড় এখানেই শেষ, এরপর উপরে শুধু বরফে ঢাকা কালো পাথরের পাহাড়। এখান থেকে এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মঁ ব্লা ট্রেকিং করে ওঠা যায়। মঁ ব্লা’য় ওঠার জন্যে কেবল কারের ব্যবস্থা নেই। এখান থেকে আগুই দি মিদি তে অন্য আর একটি কেবল কার এসে নিয়ে যাবে। শামোনি ভ্যালি থেকে আগুই দি মিদি (৩৮৪২ মি.) উঠতে সময় লাগল মাত্র ২০ মিনিট। আমি অবশ্য শুধু কেবল কারে যাওয়ার সময়ের কথা বলছি। মাঝে আধ ঘন্টা দ্বিতীয় কেবল কারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এই কেবল কার ভ্রমনটা ছিল ভীষন রোমাঞ্চকর, কিন্তু ভয়ঙ্কর নয় মোটেই।

আগুই দি মিদি পর্বত শৃঙ্গে উঠে দেখি কি নেই এখানে। দর্শকদের সমস্ত রকম সুবিধার কথা মাথায় রেখে এত ওপরেও বানানো হয়েছে খাবারের দোকান, শপিং, টয়লেট, আর সুন্দর প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে রাখা হয়েছে চারিপাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্যে। একদম চূড়ায় পৌছানোর জন্য আছে লিফ্ট্ এর ব্যবস্থাও। এই লিফ্টটা একেবারে পাহাড়ের ভেতরেই বানানো হয়েছে। অবাক হয়ে যাই এদের টেকনোলজিকাল দক্ষতা দেখে। কিভাবে একটা পর্বত শৃঙ্গ কে সাধারন মানুষের কাছে এত সহজে পৌছে দেওয়া যায়, সেই প্রচেষ্টা দেখে। লিফ্ট এ করে চূড়ায় পৌছে দেখা গেল আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে কি অসাধারন স্বর্গীয় দৃশ্য ! এখান থেকে মঁ ব্লা পর্বত চূড়া পরিস্কার দেখা যায়। আগুই দি মিদি থেকে আর একটি কেবল কারে চড়ে Glacier de Geant অতিক্রম করে ইটালি সীমানাও যাওয়া যায়। এই কেবল কার টি শুধু গরম কালেই চলাচল করে। কিন্তু আমরা সময়ের অভাবে যেতে পারিনি ইটালি সীমানায়। আগুই দি মিদি কে সরাসরি ইংরেজিতে অনুবাদ করলে ‘Needle of midday’ বলা যেতে পারে। দুপুর বেলায় শামোনি থেকে সূর্য্য কে ঠিক এই পাহাড়ের চূড়ায় বসে থাকতে দেখা যায়, তাই এই নাম। যখন কেবল কারে চড়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম, তাড়াতাড়ি নেমে এসে একটা গ্লেসিয়ার দেখতে যাব। কিন্তু ওপরে যে এত বিশাল বরফ ঢাকা পাহাড়ের সমুদ্র অপেক্ষা করে ছিল আমাদের জন্যে, তার বিন্দুমাত্র ধারনা ছিল না। চারিদিকে বরফ ঢাকা পাহাড়। অনেক নিচে শামোনি ভ্যালি দেখা যাচ্ছে। মাঝে মঝেই মেঘের কোলে ঢুকে পরছিলাম, আবার ঝিরঝির তুষারপাতও চলছিল সমান তালে। আমরা সবাই গরম কাপড় সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। তাই ভালই উপভোগ করতে পেরেছি মেঘ আর ঝিরঝির তুষারপাতের লুকোচুরির খেলা। কখনও মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের, আবার কখনও বরফ বৃষ্টিতে মাথা ভিজিয়ে দিচ্ছে। চারিদিকের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য। একদিকে গোটা পাহাড় বরফে ঢাকা। অনেকে সেখানে ট্রেকিং করছে, আর এক দিকে অনেক নীচে বয়ে চলেছে, পাহাড়ি নদী সবুজে ঘেরা পাহাড়ের ভেতর দিয়ে। সব মিলিয়ে অপূর্ব এক সুন্দর মন মাতানো অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম। তখন আর অন্য কোনো জায়গা যাওয়ার সময় নেই। শামোনি ভ্যালি তেই সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন যাব গ্লেসিয়ার দেখতে।

নীচে শামোনি শহর আর আগুই দু মিদি পাহাড়ের কিছু ছবির স্লাইড শো দিলাম :

Photobucket

*****************************************************************

আজ সকাল থেকেই ভীষণ উত্তেজিত আমি, কারণ আজ দেখব গ্লেসিয়ার (হিমবাহ) দেখতে । যা এতদিন শুধু বই’তেই পরে এসেছি। মঁ ব্লাঁ অঞ্চলে অনেক গুলো গ্লেসিয়ার রয়েছে। যেমন Mer de Glace, Glacier d’Argentiere, Glacier des Bossons. এর মধ্যে আমরা সেদিন শুধু Mer de Glace (Sea of Ice) দেখতে পেরেছি। সকালে সেদিনও হোটেল থেকে প্রাতঃরাশ করেই বেরিয়ে পরেছিলাম। প্রথমে ট্রেন এ করে উঠতে হল পাহাড়ের ওপরে। এই জার্নি’টাও ভীষণ সুন্দর ছিলো, পাহাড়ের গা ঘেঁষে সবুজ বনানীর ভিতরে ছিলো রেললাইন। দুটো মাত্র কোচ নিয়ে এই ট্রয় ট্রেন চলছিলো একেবেঁকে। যাই হোক ট্রয় ট্রেনে করে ২০ মিনিট এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম Mer de Glace glacier এর ফুটে। ওপর থেকে দেখে তো কিছুই বোঝার উপায় নেই, শুধু কালো পাথরের চাঁই ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছিল না। এখানে আবার ছোট কেবল কার এ চেপে নেমে যেতে হবে অনেকটা। এই ছোট কেবল কার গুলোকে এরা গন্ডোলা বলে। ১০ জনের বেশী একসাথে যাওয়া যায় না মনে হয়। যাইহোক নীচে তো নেমে এলাম, আর নামার পরে জানা গেল যে গ্লেসিয়ার’ কে সামনে থেকে দেখতে হলে এবার হেঁটে নামতে হবে ৩০০ টা সিঁড়ি। মানে আবার উঠতে হবেও অতটাই। ভেবে একটু ভয় পেলেও, নেমে পড়লাম জয় মা বলে। এখান থেকেই একটু আবহাওয়া বদলে গেল। বেশ বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। তাড়াতাড়ি নেমে এলাম গ্লেসিয়ারের সামনে, আর মনে হল, না এলে কি ভীষণ মিস্ করতাম। দূর থেকে যাকে কালো পাথর বলে মনে হচ্ছিল, সামনে থেকে দেখা গেল সেটা একটা নীল বরফের চাঙ্ক। এই হিমবাহটি লম্বায় ৭ কিমি আর এর গভীরতা হল ২০০ মিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার ওপরে হল হিমবাহটির উৎসস্থল। ঘন্টায় ১ সেমি গতিতে বয়ে চলেছে এই গ্লেসিয়ার, সেটা খালি চোখে দেখা অসম্ভব। এটাই হল ফ্রান্সের সব থেকে বড়ো গ্লেসিয়ার। পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এই গ্লেসিয়ার’টির ভেতরে ছোট্ট ছোট্ট গুহা বানিয়ে নানারকম বরফের স্ট্যাচু তৈরী করে তাতে লাইটিং-এর এফেক্ট দেওয়া হয়েছে। বরফের গুহার ভিতরে ঘুরে বেড়ানোর আরেকটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন বেড়িয়ে এলাম তখন বৃষ্টি তো থেমেছে, কিন্তু শুরু হয়েছিলো ঝোড়ো হাওয়া। ওর মধ্যেই ধীরে ধীরে ফটো নিতে নিতে উঠে এলাম ঐ ৩০০ সিঁড়ি। এখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো, একটা ব্যাড নিউজ, জানা গেল যে ভীষণ ঝোড়ো হাওয়া বইছে, তাই এই সময় কেবল কার চলবে না, কখন ঠিক হবে তা কিছু বলা যায় না। অগত্যা কি আর করা? ৩০০ স্টেপ তো বেশ সুন্দর ছিলো, কিন্তু এবার যেটা করতে হলো, সেটা বলতে গেলে ভয়ানক, কারণ আমাদের হেঁটে উঠতে হলো ওই ৩০০ স্টেপ-এর দশগুন উচ্চতায়, আর সেই স্টেপ গুলো সব পাথরের, এবড়ো-খেবড়ো জায়গা, সরু গলি, নীচে খাদ। কিন্তু কিছুতো আর করার নেই, আমাদের উঠতেই হবে। একদম ছোটো বাচ্চাদের বাবারা কাঁধে তুলে নিলেও, বুড়ো দের জন্যে খুব খারাপ লাগছিল। ওই রাস্তায় ১ ঘন্টারও বেশী সময় লেগে গেল উঠতে, যেটা ৫ মিনিট এরও কম সময়ে নেমেছিলাম কেবল কারে চেপে। ওপরে এসে কিছু ছবি নিয়ে আবার ট্রয় ট্রেন এ চেপে সোজা হোটেল। পথ চলার শক্তি আর ছিলো না। আবহাওয়া তখনও খুব একটা ভালো হল না দেখে, আমরা আর অন্য গ্লেসিয়ার দেখতে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারিনি। আর তাছাড়া ট্যুরিষ্ট অফিস থেকে জানাল যে তখন আর গিয়ে কোনো লাভ নেই, কারণ ওই গ্লেসিয়ার’গুলো বেশ দূরে, যেতেই সময় লেগে যাবে ২ ঘন্টা। সুতরাং, ডিনার সেরে রাত্রের শামোনিকে উপভোগ করে ফিরে এলাম হোটেল রুমে।

নীচে গ্লেসিয়ারের ভিতরের আর বাইরের কিছু ছবির স্লাইড শো দিলাম :

Photobucket

শামোনি ঘুরতে গিয়ে যদি শুধু পাহাড় আর গ্লেসিয়ার দেখেই ফিরে আসতে হয়, তাহলে তিন দিন ভালই, অবশ্য ভাগ্য সহায় থাকলে। কারণ পাহাড়ে যখন তখন আবহাওয়া বদলে যায়, আর ঐ রকম ঝোড়ো হাওয়া চলতে থাকলে সমস্ত কেবল কার গুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন অনেকেই বাধ্য হয় থেকে যেতে।

কিন্তু যারা অনেক বেশী উদ্যমী ও সাহসী তাদের জন্য বলব ৭ দিনও যথেষ্ট নয়। আমরা কেবল একটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি, আর একটি মাত্র গ্লেসিয়ার দেখেছি। কিন্তু শামোনি তে এইরকম অনেক চূড়া আছে যাতে ট্রেকিং করে ওঠা যায়। আর গ্লেসিয়ারের কথা তো আগেই বলেছি, অনেক গুলো গ্লেসিয়ার আছে। এছাড়াও আছে অনেকরকম অ্যাকটিভিটি, ট্রেকিং, স্কী রান, প্যারাগ্লাইডিং, আরো অনেক কিছু। কেবল কার-এ চড়ে পাহাড়ে উঠে, সেখান থেকে প্যারাস্যুটে জাম্পিং করার ব্যবস্থা আছে, যেটাকে প্যারাগ্লাইডিং বলে। বৃষ্টির সময় ইনডোর মাউন্টেনিং করার ব্যবস্থা আছে, তাছাড়া নানাভাবে পাহাড়ে ট্রেকিং করার উপায় বার করেছে এরা। আছে নানারকম স্কুল যেখানে স্কী করা বা এই সব জাম্পিং আর ক্লাইম্বিং শেখানো হয়। সব দেখে এনজয় করার জন্য কম করেও ৭দিন তো অবশ্যই দরকার।

Photobucket

এখানেই শেষ হল আমাদের শামোনি ভ্রমণ। আর শুরু হল আর এক নতুন জায়গা দেখার আগ্রহ। এখান থেকেই পরদিন সকালে যাব প্রথমে নিস্, ফ্রান্সের দক্ষিণে অবস্থিত মেডিটারিয়ান সমুদ্রের ধারে একটি বিখ্যাত ও ধনী শহর। তারপর সেখান থেকে যাব কান, মোনাকো, এবং মন্টি কার্লো (ফ্রেঞ্চ রিভেইরা)....ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে মোনাকো একটা ছোটো দেশ। অত্যাধিক রকমের ধনী শহর, চারিদিকে ক্যাসিনো দিয়ে ভরা। কিন্তু প্রবেশ করার ক্ষমতা সবার নেই। কিন্তু সে গল্প আজ নয়, পরে কোন এক দিন শোনাব। আজ এখানেই ইতি।



সুপর্না মিত্র
৮ই অগাস্ট, ২০০৮
প্যারিস, ফ্রান্স।

৩ দিনের প্যাকেজ ট্যুর: কুন্নুর-উটি-কোয়েম্বাটুর :

কুন্নুর :
উটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও মনোরম। কিন্তু এখন প্রচন্ড ঘিঞ্জি হয়ে যাওয়ার আমরা ঠিক করলাম উটি’তে না থেকে কুন্নুর এ থাকব। উটি থেকে কুন্নুর মাত্র ১৯ কিমি দুরে, কিন্তু উটির মতো ভীড় এখানে নেই। কুন্নুর এককথায় বলতে গেলে নীলগিরি পর্বতমালার ওপর একটা ছোট্ট বাগিচা শহর (plantation town) চারিদিকে সবুজ, আর ঠান্ডা পরিবেশ সফরের ক্লান্তিকে খুব সহজেই ভুলিয়ে দেয়। শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে পালিয়ে কটা’দিন খুব আনন্দে কাটিয়ে এলাম আমরা। অনেকরকম ভাবে যাওয়া যায় এখানে, তবে আমরা ব্যাঙ্গালোর থেকে কোয়েম্বাটুর চলে গেলাম, সেখান থেকে আরেক’টা পাহাড়ি রাস্তা, ১৪’টা হেয়ার পিন বাঁক, সুন্দর সুন্দর জলপ্রপাত, অদ্ভুত সুন্দর সব শিলা (rock), আর মেঘের ফাঁক ফেকে উঁকি দেওয়া পাহাড়ের হাতছানি আমাদের দু’ঘন্টার জার্নিকে আরো সুন্দর করে দিলো। বু ঝতেই পারলাম না কখন সমুদ্রতল থেকে ১৯৩৯ মিটার ওপরে উঠে এসেছি।

কিভাবে যাবে:
ব্যাঙ্গালোর থেকে সড়কপথে :
ব্যাঙ্গলোর---মাইসোর---বান্দপুর(ফরেস্ট)---গাদালুর—উটি---কুন্নুর
তামিলনাড়ু’র অন্যান্য শহর থেকেও সড়কপথে (by road) আসা যায়।
ট্রেন :
সবচেয়ে কাছের ট্রেন স্টেশন হল কোয়েম্বাটুর,সেখান থেকে গাড়ী ড্রাইভ করে ২ ঘন্টা(হোটেলে আগে থেকে বলে রাখলে ওরা ব্যবস্থা করে দেয়)
আকাশপথে(by air):
সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট হল কোয়েম্বাটুর।

থাকার ব্যবস্থা:
সব রকমের হোটেল এখানে রয়েছে- আয়ুর্বেদিক স্পা,রিসর্ট,স্টার হোটেল থেকে ছোট মটেল(motels) ৬০০ টাকা থেকে ৯০০০ টাকা (প্রতিদিন)। নিম্ন (lower) কুন্নুর খুব ঘিঞ্জি তাই উচ্চ(upper )কুন্নুরেই থাকা ভালো।

দেখার জায়গা:
প্রথম দিন :
চা বাগিচা, সিমস্ (sim’s) পার্ক, ল্যাম্ব রক (lamb rock), ডলফিন নোজ(dolphine nose), স্লিপিং লেডি রক(sleeping lady rock), ক্যানিং সীট(canning seat), সেন্ট ক্যাথারাইন ফলস্ (St.Catharine falls),ল ফলস্ (law falls)। এছাড়া চা ফ্যাক্টরীও যাওয়া যায়, যদি সপ্তাহের মাঝে যাওয়া হয়।
অনেক ট্রাভেল এজেন্ট রয়েছে এই সমস্ত জায়গা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য।তবে ভালো হয় যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করবে তাদেরকেই বললে।

শপিং:
এখানে টোডা উপজাতিদের তৈরী গয়না, কাপড়ে সূতোর কাজ, অ্যান্টিক আসবাবপত্র, নানা ধরনের সুগন্ধি তেল (ইউক্যালিপটাস ওয়েল, ক্লোভ ওয়েল), ভালো মশলাপাতি (এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ), মধু, একটু ভিন্ন ধরনের মোমবাতি পাওয়া যায়। আর খুব ভালো নানা ধরনের চা (মশলা চা, চকোলেট চা) পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় দিন:

উটি:
কুন্নুর থেকে পরের দিন জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম উটি দেখার জন্য। কুন্নুর থেকে উটি মাত্র ১৯ কিমি, যাওয়ার পথ খুব সুন্দর ঘন সবুজে ঢাকা। হঠাৎ হঠাং মেঘের দল সব ঝাঁপসা করে দিয়ে যাচ্ছিল। ৪৫ মিনিটি পৌঁছে গেলাম উটি। উটির উচ্চতা ২২৪০ মিটার। যদি হাতে সময় থাকে তাহলে ট্রয় ট্রেন-এও যাওয়া যায়, ভীষণ সুন্দর যাওয়ার পথ। ২০৮ টি কার্ভ, ১৬ টা ট্যানেল, ২৫০ টা ছোট ব্রিজ হওয়া ছুঁক ছুঁক স্টীম ইঞ্জিনের সময় লাগে ২ ঘন্টা।

দেখার জায়গা:
উটি’তে দেখার মত অনেক জায়গা আছে আছে তার মধ্যে যে গুলো খুব জনপ্রিয় সে গুলো হল বোটানিক্যাল গার্ডেন, রোজ গার্ডেন,থ্রেড (thread) গার্ডেন,স্টোন হাউস, মিউজিয়াম, বোট ক্লাব, উটি লেক দোদাবেতা শৃঙ্গ।

অ্যাকটিভিটি:
উটি লেক এ বোটিং করার ব্যবস্থা আছে। আর যদি শুধু উটি’তে যাও তবে মাছ ধরার (fishing) ব্যবস্থা আছে। গল্ফ ক্লাব এ একদিন গল্ফ খেলতে পারো। তবে সমস্ত রকম অনুমতির জন্য তামিলনাড়ু পর্যটন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

শপিং:
মোটামুটি এক ধরনের জিনিস পাওয়া যায় কুন্নু্ আর উটিতে । তবে উটিতে হোম মেড চকোলেট খুব ভালো পাওয়া যায়।

তৃতীয় দিন:

কোয়েম্বাটুর:
প্রাতঃরাশ সেরে আমরা হোটেল থেকে চেক আউট করে বেড়িয়ে পড়লাম কোয়েম্বাটুর এর উদ্দেশ্যে। সেই দিন’ই রাত্রিবেলা ব্যাঙ্গালোর ফেরার ট্রেন ধরব, তাই ঠিক হল আজ আমরা কোয়েম্বাটুর দেখবো সারাদিন ।

দেখার জায়গা:
ফুট হিলস্’ এই মাটুপালায়াম শহর আর কাছেই ছিলো আরুলমিগু আরঙ্গানাথা স্বামী থিরুকইল মন্দির। সেটা দেখলাম, খুব সুন্দর মন্দির। এখানে সবাই বলে এই শিব লিঙ্গ প্রতি বছর একটু একটু করে বড় হয়।
এরপর গেলাম মুরুধে মালাই মন্দিরে, এটি মুরুগন দেবতার মন্দির। পাহাড়ের ওপর ছোট ও খুব সুন্দর মন্দির। আর পাহাড়ের ওপর থেকে শহর’টা দেখেও খুব সুন্দর লাগে। তারপর গেলাম কোয়েম্বাটুর শহর থেকে ৭ কিমি দূরে পেরুর পাট্টেস্বরা মন্দির। খুব সুন্দর বিশাল লিঙ্গ ও স্থাপত্য দেখে মন ভরে যায়। আরও কিছু মন্দির আছে হাতে সময় থাকলে দেখতে পারো। এরপর শহরের ভেতর মিনি চিড়িয়াখানা দেখলাম।

শপিং:
এখানে সব রকমের টেক্সটাইল খুব সস্তা তাই মনের ইচ্ছা মতো জামাকাপড় কেনা যায়।আর যদি বাজেট বেশী থাকে তবে খুব সুন্দর ডিজাইনের (দক্ষিণ ভারতীয়) সোনার গয়না পাওয়া যায় এখানে ।

বাজেট:
ট্রেন ভাড়া+হোটেল ভাড়া(আমরা মিডিয়াম হোটেল নিয়েছিলাম ভাড়া ছিল ২২০০টাকা প্রাতঃরাশ সহ)+ট্যাক্সি ভাড়া।
এই সব নিয়ে মোট ১২৭০০ টাকা খরচ হয়েছিলো।

ট্রাভেল টিপস্;
বছরের যে কোনো সময়ই এখানে আসা যায় তবে জুন-জুলাই-এখানে বৃষ্টি হয় তাই ওই সময়’টা বাদ দিয়ে যাওয়ায় ভালো। বাকি সময় এখানকার আবহাওয়া বেশ ভালো থাকে। কুন্নুর ও উটি’তে দিন ও রাত্রের তাপমাত্রার মধ্যে অনেকটা পার্থক্য থাকে তাই ট্রাভেল ব্যাগে গরম জামাকাপড়, ছাতা, সান ব্লক লোশন আর কিছু প্রয়োজনীয় মেডিসিন রাখা দরকার। হোটেল বুকিং আগে থেকে করে রাখলে ভালো।





লেখিকা : সুপর্না ভট্টাচার্য্য
২০শে জুলাই, ২০০৮
ব্যাঙ্গালোর, ইন্ডিয়া

Wednesday, August 13, 2008

এই সেই হিরোশিমা :



ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি-“ ছোট্ট একটা দেশ জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ছারখার হয়ে গিয়েছিল, অ্যাটম বোমায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর দুটো। সে দেশ মাত্র কয়েক বছরে কি উন্নতি-ই না করেছে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম শক্তি……”ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে পরে বিখ্যাত অনুবাদ গ্রন্থ “হিরোশিমার মেয়ে” বইটার কথা, যেটা ওই বয়েসে তেমন না টানলেও কিশোরী নায়িকা ‘শুমিকো’ মনে বেশ দাগ কেটেছিলো। ইতিহাস এ পড়া হিরোশিমা , নাগাসাকি শহর দুটো সব মিলিয়ে তাই মনে বেশ একটা রোমাঞ্চকতার ছোঁয়া এনে দেয়। সেই জন্যই জাপানে এসে প্রথম ছুটিতেই হিরোশিমার প্ল্যান করে ফেললাম, সঙ্গে রইল ওসাকা-খ্যওটো-হোক্কাইডো। তাও আবার বছর শেষের ছুটিতে, যখন হিরোশিমা কাঁপতে থাকে তুষারপাতে। সঙ্গে আবার দশ মাসের শিশু!!

ইয়োকোহামা থেকে হাইওয়ে ধরে আমাদের বাস যাত্রা শুরু করল। সারারাত্রির যাত্রাপথ, খুব আরামদায়ক বাসের জন্য বেশ ভালই ঘুম হলো। ভোরবেলা ঘুম ভেঙে জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখি প্রবল তুষারপাত হয়ে চলছে। রাস্তাঘাট দ্রুত ঢেকে যাচ্ছে তুলোর মতো তুষার এ। বাস চলেছে হাইওয়ে দিয়ে, দুপাশে নীচু নীচু পাহাড় আর শুধু বরফ আর বরফ। আস্তে আস্তে বাস ঢুকে পড়ল শহরাঞ্চলে। একটা দু’টো ফ্যাক্টরী, গোডাউন চোখে পড়ল। রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে আছি, এই বুঝি চোখ পড়ে অ্যাটম বোমার ধ্বংসাবশেষে। কই সবই তো ঝাঁ চকচকে নতুন নতুন অট্টালিকা!!

সকাল সাড়ে আট’টা নাগাদ এসে গেল গন্তব্য বাস স্টেশন। বাইরে প্রবল তুষারপাত, এতটা আশা করিনি। ছোট্ট মর্নিং’কে নিয়ে টেনশন এ পড়ে গেলাম। এত ঠান্ডা সহ্য করতে পারবে তো??

যাই হোক ট্যাক্সি নিয়ে পৌঁছে গেলাম হোটেল (ডর্মি ইন) এ। হোটেল’টা নাকি “হিরোশিমা অ্যাটমিক বম্ব ডোম” এর বেশ কাছেই! এই প্রসঙ্গে বলে রাখি হিরোশিমা নাম’টা সারা পৃথিবীর মানুষ জানে কুখ্যাত পারমানবিক বিক্ষেপণ-এর কারনে। হিরোশিমা জাপানের প্রধান ভূ-খন্ড হংশু দ্বীপ এর দক্ষিণ-পশ্চিম এ অবস্থিত একটি বিশাল ও বর্ধিষ্ণু জেলা। এর রাজধানী হিরোশিমাতেই হয়েছিলো পারমানবিক বোমা বিক্ষেপণ ১৯৪৫ সালের ৬ই আগষ্ট। হিরোশিমা শহর ছাড়াও এই জেলায় দেখার আছে বহুকিছু। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এখানকার বৈশিষ্ট্য। এছাড়া এখানে রয়েছে বহু বিখ্যাত সিন্থো (Shinto ) ধর্মীয় মন্দির এবং বীর সামুরাইদের ঐতিহাসিক পীঠস্থান ।

যাই হোক হোটেলে মালপত্র নামিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম । আজকের গন্তব্য ‘সানদানক্য উপত্যকা’ (valley)। হিরোশিমা শহরের মধ্যে দিয়ে বাস এ করে চলেছি, আকুল আগ্রহে বাস এর জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি-সুন্দর শহর। অ্যাটমিক বোমা’র ধ্বংসাবশেষের কোনো চিহৃ’ই নেই। সম্পূর্ণ নতুন করে শহরটা’কে তৈরী করা হয়েছে। দু চোখ ভরে দেখতে দেখতে চললাম। এদিকে তুষারপাত বেড়েই চলেছে।

শহর ছাড়িয়ে বাস এগিয়ে চলেছে সানদানক্য উপত্যকা’র দিকে। তুষারপাত পরিণত হয়েছিলো প্রবল তুষারঝড়ে। রাস্তাঘাট বেশ কয়েক ইঞ্চি বরফের তলায় চাপা পড়ে গেল দেখতে দেখতে। একদিকে নদী, আরেকদিকে মাঠ,ঘাট, বাড়ীঘর। নদীর জল জমে বরফ। এদিকে আমাদের না আছে বরফের জুতো,না আছে এক্সটা কোনো বডি-ওয়ার্মার। মর্নিং এরও খুব কিছু এক্সটা পোটেকসন্ ছিল না, ওর কোট এর পকেটে শুধুমাত্র বডি-ওয়ার্মার দুটো পাউচ্ ঢুকিয়ে রেখেছিলাম। আসলে আমরা এরকম প্রবল তুষারপাতের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ড্রাইভারও বলল, ‘আজকে সব দোকানপাট ও হোটেল বন্ধ ভারী তুষারপাতের জন্য, বরফের জুতো না থাকলে হাঁটা যাবে না পুরু বরফের মধ্যে দিয়ে’। অতএব আমরা যেন ফিরে যাই।

যাইহোক, বাস আমাদের নামিয়ে দিয়ে বরফের ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল। হাঁটু পর্যন্ত বরফ। দু-তিনটে হোটেল আর দু-একটা দোকানপাট দেখা যাচ্ছে দূরে। সব কিছুর’ই ঝাঁপ বন্ধ । এদিকে খিদেও পেয়ে গেছে খুব, দুপুরের খাওয়াও হয়নি, হোটেলের দরজায় দরজায় নক্ করে অনুরোধ করলাম; যদি কিছু খাবার ব্যবস্থা করা যায় কিন্তু উত্তর একটাই ‘গোমেন নাসাই, গোমেন নাসাই’ (দুঃখিত,দুঃখিত)। তবে অবশেষে একটা ব্যবস্থা করা গেল। রাস্তার শেষে একটা গেস্ট-হাউস, অনেকটা পুরানো জমিদার বাড়ীর মতো। সেখানে আধুনিক এয়ার-কন্ডিশনের বদলে রয়েছে ফায়ার-প্লেস আর কেরোসিন হিটার………..উফফফফ একদম ভুতের গল্প না?? একদম সত্যি! ঘটনাটা যদিও গল্পের মতোই ঘটছিলো, একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বেড়িয়ে এলেন এবং আমাদের প্রতি করুণাবশতঃ (হয়ত সঙ্গে ছোট্ট শিশু রয়েছে বলেই) আমাদের বসতে দিলেন রিসেপশনে। বাড়িয়ে দিলেন কেরোসিন হিটারের উত্তাপ । আমরাও শরীর ও মনের উষ্ণতা একটু ফিরে পেলাম। গুছিয়ে বসতেই পেটের খিদে আরো মোচর দিয়ে উঠল। ভদ্রমহিলা’কে আধো আধো জাপানিজ ভাষায় সে কথা জানাতে উনি আকারে ইঙ্গিতে যা বললেন তা হল ‘খাবার তো কিছু পাওয়া যাবে না, তবে দেখি যদি সামান্য কিছু ব্যবস্থা করতে পারি তোমাদের জন্য’। বেশ কিছুক্ষণ বাদে প্লেট ভর্তি ‘মোচি’ (হাতে তৈরী মিষ্টি বিন্ এর পিঠে) আর গরম গরম সবুজ চা হাজির করল আমাদের সামনে। এমন আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ। অনেক অনুরোধ স্বত্ত্বেও কোনো পয়সা কিন্তু নিলেন না উনি। জাপানেও তাহলে আমাদের দেশের মতই ‘অতিথি নারায়ণ’। যাই হোক যথা সময়ে বাস এসে গেল, আমরা সানদানক্য উপত্যকা’কে টাটা জানিয়ে হিরোশিমা শহরের দিকে রওনা হলাম । তুষারঝড় তখনও হয়েই চলেছে, সব মিলিয়ে সানদানক্য উপত্যকা একটা আশ্চর্য্য অভিজ্ঞতা।

পরদিন সকালে বেড়িয়ে পড়লাম মিয়াজিমার উদ্দেশ্যে। হিরোশিমা জেলার সব চাইতে সুন্দর দ্বীপ এটা।“ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট” হিসাবেও পৃথিবী খ্যাত। ৭০’এর দশকের বিখ্যাত হিন্দি সিনেমা “লাভ ইন টোকিও” এর অনেক দৃশ্য এখানের শ্যুট হয়েছিল । ট্রাম এ করে মিয়াজিমা গুচি গিয়ে, সেখান থেকে ফেরীতে “সেতু উপসাগর” পার হয়ে অপূর্ব সুন্দর মিয়াজিমা দ্বীপ (আইল্যান্ড)। মিয়াজিমা’তে পা দিয়েই দেখি যা ভেবেছিলাম তার চাইতেও অনেক সুন্দর এই দ্বীপটি। মিয়াজিমা দ্বীপটি প্রধানত বিখ্যাত এখানকার সিন্থো (shinto) ধর্মীয় মন্দিরগুলোর জন্য। জাপানিজ’দের এটি একটি পবিত্র পীঠস্থান। এখানেই আছে বিখ্যাত ইটশুকুশিমা মন্দির আর বিখ্যাত কাঠের সিংহদুয়ার, যা সিন্থ(Shinto)ধর্মের একটা বৈশিষ্ট্য। দুগ্ধ ফেনিল নীল সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে ইটশুকুশিমা মন্দির এ যাওয়ার রাস্তা। নববর্ষের (দিনটা ছিল ১লা জানুয়ারী) মেলা বসেছে সেখানে। রাস্তার ধারে ধারে হরেক রকম খাবার দাবার আর খেলনার দোকান। অনেকটা আমাদের দেশের পীঠস্থান গুলোর মতোই। আমরা খেলাম মশালাদার অক্টোপাস ভাজা, ঝলসানো সুস্বাদু ঝিনুক আর ওই অঞ্চলের বিখ্যাত এক ধরনের ঝলসানো বাদাম। দুপুরের খাওয়া’টা চমৎকার হলো ।


ইটশুকুশিমা মন্দির দেখে আমরা এগিয়ে গেলাম পঞ্চতল প্যাগোডার দিকে। গাঢ় লাল আর ঝলমলে সোনালী রঙের অপূর্ব সুন্দর স্থাপত্য এই প্যাগোডার। চেরী আর পাইন গাছের ফাঁক থেকে দূরে চোখে পড়ছিল পঞ্চতল প্যাগোডার চুড়া। ডিসেম্বর মাস তাই চেরী গাছ পুষ্পবিহীন। বসন্তকালে সাদা, গোলাপি চেরী ফুলে যখন ভরে ওঠে মিয়াজিমা দ্বীপ, তখন এর সৌন্দর্য্য অতুলনীয় আর ঐশ্বরিক হয়ে ওঠে। পঞ্চতল প্যাগোডা’র পাশেই অবস্থিত "Toyokuni Shrine". এই মন্দিরের সংগ্রহে রয়েছে কিছু দুষ্পাপ্য ‘সামুরাই’ চিত্রকলা।

এবার গন্তব্য হিরোশিমার আসল দ্রষ্টব্য ‘অ্যাটমিক বম্ব ডোম’ আর ‘বিশ্ব শান্তি সংগ্রহশালা’, এর জন্যই এত রুদ্ধশ্বাসে হিরোশিমা আসা। ফেরীতে করে আবার “সেতু উপসাগর” পার হয়ে ট্রাম-এ করে চলেছি। দূর থেকেই চোখে পড়ল ছবিতে দেখা ‘এ্যাটমিক বম্ব ডোম’ (জাপানিজ ভাষায় গেমবাকু ডোমু) এর চূড়া। চারপাশে পায়ের নীচে চেয়ে দেখি কই কোথাও তো চোখে পড়ছে না অ্যাটম বোমার ধ্বংসাবশেষের চিহৃ।‘অ্যাটমিক বম্ব ডোম’ আসলে একটা নামকরা প্রেক্ষাগৃহ ছিলো যার চূড়াতে ক্ষেপন করা হয়েছিলো বিশ্ব মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম পামানবিক বোমা, ১৯৪৫ সালের ৬ই আগষ্ট, সোমবার, এক সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল সকালে। মাইলের এর পর মাইল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেলেও এই প্রেক্ষাগৃহের কাঠামোটি কোনোরকমে টিকে থাকে। কারণ, পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ কেন্দ্র থেকে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়েছিল চারপাশে, মূল কেন্দ্র’টিকে তুলনামুলক ভাবে অক্ষত রেখে। ‘আলোয়’ নদীর ধারে বিশাল ইট পাথরের কঙ্কালের মতো দাড়িয়ে থাকা কাঠামোটি বহন করে চলেছে মানবজাতির ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুরতার ইতিহাস। মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে দুঃখে ও লজ্জায়।

‘গেমবাকু ডোমু’কে ঘিরে জাপান সরকার গড়ে তুলেছেন বিশ্ব শান্তি উদ্যান। এই উদ্যানটির বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে রয়েছে পারমানবিক বোমায় নিহত প্রায় দেড় লাখ মানুষের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত নানা ধরনের সৌধ ও সংগ্রহশালা। এখানেই রয়েছে হিরোশিমার ‘বিশ্ব শান্তি সংগ্রহশালা’ (ওয়ার্ল্ড পিস্ মেমোরিয়াল মিউজিয়াম) যা দেখতে দেশ বিদেশের বহু মানুষ ছুটে আসেন। এখানে সংগৃহীত আছে বোমায় নিহত মানুষজনের ব্যবহৃত জিনিষপত্র, ঐতিহাসিক মুহুর্তটির কিছু দুষ্পাপ্য ফোটোগ্রাফ এবং আরো বহু নিদর্শন যা দর্শকদের কাছে পোঁছে দেয় পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের ভয়াবহতার কাহিনী। এছাড়া সারা পৃথিবীর বর্তমান পারমানবিক প্রকল্পগুলি সম্পর্কে সাধারন মানুষকে অবহিত করার জন্য রয়েছে নানা ধরনের অডিও-ভিস্যুয়াল (Audio-Visual) প্রদর্শনীর আয়োজন।

এইসব উদ্যোগ বোমায় নিহত মানুষজনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের পারমানবিক শক্তির অপব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কেও ওয়াকিবহল করে তোলে এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে সমস্ত দর্শক। এভাবেই শান্তির বানী প্রচার করে চলেছে ‘গেমবাকু ডোমু’ ও ‘বিশ্ব শান্তি সংগ্রহশালা’। মিউজিয়াম দেখে যখন বাইরে এলাম তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে চারিদিকে মন খারাপ করা বিষন্নতা।

দেখা হল ঐতিহাসিক হিরোশিমা। পরদিন ভোরবেলা বাস। বিদায় জানালাম হিরোশিমাকে, সঙ্গে করে নিয়ে এলাম শান্তির বানী যা ছড়িয়ে পড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।





তানিয়া রায় ভট্টাচার্য্য
ইয়োকোহামা(Yokohama), জাপান
৩১শে জুলাই, ২০০৮

Tuesday, August 12, 2008

হিমালয়ের হাতছানি :


হোলির দিন সবাই যখন আবীর আর রঙ খেলায় মেতে উঠেছে, আমরা তখন আমাদের ভ্রমন কতটা রোমাঞ্চকর হবে ভাবছি। অবশেষে আমরা স্যাক কাঁধে বেরিয়ে পড়লাম। আমরা নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলাম ২৪ শে মার্চ। এখানে এসেই আমার ভীষন আনন্দ হল, সুদীর্ঘ ১৪ মাস পর বাংলায় পা রাখলাম। আর দেখতে পাব সুন্দরী 'কাঞ্চনজঙ্ঘা'। যাই হোক, আমরা টিম লিডার দেবুদার সঙ্গে দেখা করলাম। তারপর একে একে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব সেরে ফেললাম। আমাদের সাড়ে ১৪ জনের দল নিয়ে ২ টি গাড়ি রওনা দিল। আগামী গন্তব্য মিরিক। পথের দুপাশে চা'বাগান সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। আমরা যত এগচ্ছি আবহাওয়া ততই খারাপ হচ্ছে। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর মিরিক শহরে পৌঁছলাম। এখানেই একটা রেস্টুরেন্টে আমরা লাঞ্চ করে নিলাম। খাবার পর বেশ শীত করছিল। কাঁপতে কাঁপতেই আমরা গাড়িতে উঠলাম। গাড়ির কাঁচ তোলা থাকায় আর ঠাণ্ডা লাগল না। দেবুদা সবাইকে বলে দিলেন বাইরে চোখ রাখতে, কিছুটা গিয়েই দেখলাম টল টল করছে মিরিক লেক। চারদিকে গাছ ঘেরা। দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিল মেঘের আড়ালে। বেশ কিছু পযর্টক প্যাডেল বোট চালাচ্ছে। আমরা গাড়ি থেকেই দেখে নিলাম, ছবিও উঠল। পাহাড়ি ছেলেমেয়ে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছে হইহই করে। বেশ ভাল লাগল জায়গাটা। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম 'মানেভঞ্জন'। এখানে আমাদের গাড়ি ছেড়ে দিতে হবে, সঙ্গী হবে ল্যান্ডরোভার। এই গাড়িটির নাম পড়েছি, কিন্ত চোখে দেখলাম প্রথমবার। গাড়িটির ইঞ্জিন ১৯২৫ সালে তৈরি। পাহাড়ি রাস্তায় এই গাড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে যায়, গতি ৪ কিমি/ঘঃ। এদিকে আকাশ তখন ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেছে ,টিপ টিপ করে বৃস্টি পড়ছে, আর ভীষণ হাওয়া দিচ্ছে। এটি একটি ছোট জনবসতি, কিছু্‌ দোকানপাট রয়েছে। ট্রেকারসরা এখান থেকেই জিনিসপত্র নিয়ে হাঁটা শুরু করে। আমাদের মধ্যে কয়েকজন হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। আমাদের আর সে সুযোগ দিল না দেবুদা। আমরা ল্যান্ডরোভারে চেপে বসলাম। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা। পাহাড়ি রাস্তায় লাফাতে লাফাতে চলেছে, তবে এই রাস্তা হেঁটে গেলেও মন্দ হত না। এই যানটি চাপার সৌভাগ্য আর হবে কি না হবে, তাই এতে চেপেই আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম 'চিত্রে'। পাহাড়ে ঘেরা একটা জায়গা, গাছপালাও কম। অদূরে দেখলাম কয়েকটা ঘর রয়েছে। তারপর জানলাম আজকের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা এখানেই। নামটাও কিন্তু দারুণ!!!! " Hawk's nest". চোদ্দজনের দল তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে তিনটি ঘরে রইল। দুদিন রাস্তার ধকল কাটিয়ে একটু বিশ্রামের জন্য হাত মুখ ধুয়ে শরীরটাকে ছড়িয়ে দিলাম পাঁচ মিনিট। তার পর চায়ের সাথে খানিক আড্ডা হল। এখানে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়েছে, তাতে বাতিও জ্বলছে, টিভিও চলছে। রাতের খাবার এসে গেল নটার আগেই। ডাল, ভাত, আলুভাজা, পাপড়, স্যালাড আর ঘরে তৈরী আচার। আয়োজন সামান্য হলেও আমরা তাই চেটেপুটে খেলাম। এদের আতিথেয়তা,আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করল। সেই রাতে অত ক্লান্তির পরেও একটুও ঘুম এল না। উচ্চতা জনিত কারণে এবং এক সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতার জন্য সারারাত জেগে কাটলো।

এখানে খুব তাড়াতাড়ি সকাল হয়ে যায়। সবাই তাড়াতাড়ি প্রাতরাশ সেরে নটার সময় যাত্রা শুরু করলাম। আজকের গন্ত্যব্য ৬ কিমি দুরের টংলু। যাত্রার শুরুতেই সবাই একটা করে লাঠি নিয়ে নেওয়া হল। নিজেদের সব লাগেজ গাড়িতে তুলে দেওয়া হল। নিজের সাথে জল,বিস্কুট,চকলেট ইত্যাদি নিলাম। প্রথমে এক কিমি রাস্তা বেশ ভাল, তারপর চড়াই শুরু হল তবে সেরকম কঠিন নয়। পথে যেতে যেতেই দেখলাম গোলাপি গুরাশ ফুটে রয়েছে। আর দেখলাম সাদা পদ্ম ফুলের মত ম্যাগনোলিয়া। এই সব দেখতে দেখতেই আমরা এগিয়ে চললাম। মাঝে মাঝে ফটো তোলাও চলতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে আমরা মেঘমা এসে পৌঁছলাম। এখানে কিছু চোরতেন চোখে পড়ল। এখানে জাপানিদের একটা স্কুল দেখলাম। কেউ কেউ চা খেয়ে একটু জিরিয়ে নিল। তখনি শুনলাম যে দলের দুজন পথ হারিয়ে নেপালে ঢুকে পড়েছিল। আমি আবার হাঁটা শুরু করলাম। এবার জীপ রাস্তা ছেড়ে চড়াই বেয়ে উঠতে সুরু করলাম। কিছুটা যাবার পর পর নজর রাখলাম সঙ্গীদের দিকে। হঠাৎ মনে হল অনেকটা পথ এসে গেছি, কাছাকাছি কাউকেই দেখতে পারছি না। আমার সংগে আছে টুপুর। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। চারপাশে উঁচু পাহাড় ঘিরে আছে আর ভীষণ হাওয়া দিচ্ছে। মনে হল এই বুঝি আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবে। দুর থেকে দেখলাম দেবুদা আসছে। তখন আবার হাঁটা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর জীপের রাস্তা ধরলাম। কিছুটা যাবার পরই কয়েকজন স্থানীয় মানুষ চোখে পড়ল। তার মানে আমি পৌঁছে গেছি টংলু। টংলুর উচ্চতা ১০০৯৮ ফুট। আমরা আজ থাকব ট্রেকারস্ হাট এ। ট্রেকারস্ হাটের অবস্থান এমন জায়গায় যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে খুব ভাল দেখা যায়। কিন্তু এখন আকাশ মেঘলা যেকোন সময় বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা ,তাই কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চার ঘন্টা হাঁটার পর পেটে ছুঁচোবাজি শুরু হয়ে গেছে। এদিকে দেবুদা ডাকাডাকি করছে সবাইকে স্ট্রেচিং করার জন্য, তা না হলে পরের দিন হাঁটা যাবেনা। ১০-১৫ মিনিট করতে হল। তারপর আমরা লাঞ্চ করলাম। পেটে এত ক্ষীদে তখন ডাল-ভাত অমৃত সমান। তখন দেখলাম বাইরে এক বিদেশী দল তাঁবু খাটাচ্ছে। এখানে থাকার জায়গা না পেলে আমাদেরও ঐভাবে থাকতে হত, তাই সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে এখানে আসতে হয়। হাওয়ার দাপট ক্রমশ বাড়ছে, সঙ্গে বৃষ্টি ও শুরু হয়েছে। ভাবলাম চারপাশটা একটু ঘুরে দেখব, তা আর যাওয়াহল না। ঘরের মধ্যেই আড্ডা বসল। রাত বাড়ার সঙ্গে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। সোয়েটার জ্যাকেট,টুপি,মোজা সবকিছু ভেদ করে ঠান্ডা ঢুকছে। আমাদের আড্ডার সঙ্গে চলল চা-মুড়ি খাওয়া। গল্পে-গানে কোথা দিয়ে যেন সময় কেটে গেল। রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। কেউ কেউ স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে পড়ল। কিন্তু সারারাত ঠান্ডায় আমার দুচোখের পাতা এক হল না। বাতাসের শব্দ শুনে আর শীতের কামড় খেয়ে রাত কাবার হল। পরদিন সুর্য্য ওঠার আগেই ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। কিন্তু ক্যামেরা ধরব কি করে, ঠান্ডায় তো হাত জমে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে অন্ধকারসরে পুব আকাশে আবির খেলা সুরু হচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাব্রু, পান্ডিম, একে একে দেখা যাচ্ছে। সূর্য্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে হিমালায়ের শৃঙ্গ গুলোর উপরে। এ এক অন্য সকাল! দিনের সূচনা যে এত সুন্দর হয় এর আগে আমার জানা ছিল না। কাঞ্চনজঙ্ঘার সে কি রূপ ! মনে হচ্ছে কোন মহাপুরুষ নিদ্রিত আছেন। তাই এই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্লিপিং বুদ্ধ নামে পরিচিত। প্রচন্ড ঠান্ডা আর ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপুনি দিচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে বেশ কিছু ছবি নিলাম। তারপর চা খেয়ে শরীর একটু গরম হল । টংলুর ভোর আমার এক পরম প্রাপ্তি।

আজ আমাদের অনেকটা পথ হাঁটতে হবে এবং এই পথ বেশ দূর্গম । আজ ১৪ কিমি হাঁটতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করলাম। এই পথটা আরো বেশী সুন্দর। যত এগোতে লাগলাম লাল গুরাস আর ও নাম না জানা পাহাড়ি ফুল দেখতে পেলাম। ১ কিমি গিয়েই টুমলিং। এখানেও টেক্রারস রা থাকতে পারে ,ব্যবস্থা আছে। আমরা এখানে সময় নষ্ট না করে এগিয়ে চললাম। কিছুটা যাবার পর দেখলাম গাছপালা একদম কম, চারদিকে শুধু খাড়া পাহাড়। এরপর পুরো রাস্তাটাই সিঙ্গালিলা ন্যাশানাল পার্ক এর অন্তর্ভূক্ত। হঠাৎ আমাদের মুভি ক্যামেরা গরবর করল, মনে হচ্ছে ঠান্ডার জন্য অথবা ময়স্চার ঢুকে গেছে। আপাতত ছবি তোলা বন্ধ রেখে হাঁটা দিলাম। ততক্ষণে দেবুদা এসে গেছে, আমাদের তাড়া দিল। বলল ৩ কিমি গিয়ে 'গৈরিবাস' থেকে ২৫ টাকা দিয়ে পার্কে প্রবেশ করা যাবে। যত যাচ্ছি রাস্তা তত খারাপ হচ্ছে। চারদিকে অনেক ম্যাগনোলিয়া ফুটে আছে। গাছগুলোয় পাতা নেই, ফুলে ভরে আছে শুধু। পথের সৌন্দর্য্য ক্লান্তি দূর করে দিচ্ছে। আমরা কখনো নেপাল আবার কখনো ভারতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। গৈরিবাসে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ক্যাম্প রয়ছে। ইতিমধ্যে ক্যামেরাকে একটু রোদ খাওয়াতেই ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু ক্যামেরা চালানোয় ধমক খেলাম। এখান থেকে কয়েকজন গাড়িতে উঠে গেল, আমার মেয়ে টুপুর ও উঠে গেল। আমি আর আমার হাজব্যন্ড হাঁটা শুরু করলাম। এবার পুরো রাস্তাটা চড়াই। আমরা জিপের রাস্তা ছেড়ে দেবুদার চিহ্নিত পথ ধরে চলেছি। এপথ আমি কোনদিন ভুলব না। পুরোটাই ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেছে। বুনো গন্ধ গায়ে মেখে শুকনো পাতার খসখসানি শুনতে শুনতে চলেছি। একটু করে দম নিচ্ছি আর এগিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে নাম না জানা পাখীর মিষ্টি গান কানে আসছে। কিছুটা চড়াই পেরিয়ে জিপ রাস্তা ধরলাম। ঘন্টাখানেক পর আমরা কৈয়াকাটা পৌঁছলাম। চা-বিস্কুট খেয়ে আবার এগোলাম। চা টা দারুন বানিয়েছিল, শরীরটা বেশ চাঙ্গা হল। আমাদের আরো ২ কিমি যেতে হবে। তাড়াতড়ি পা চালালাম। আবহাওয়া ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। আমি টুপুরের হাত ধরে দ্রুত পা চালালাম।আর থামা নয় সোজা রাস্তা, হারাবার ভয় নেই। এদিকে প্রচুর ক্ষিদে পেয়ে গেছে। আবার শীত ও করছে। আমি কোনদিকে না তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। দূর থেকে ১টা পুকুর চোখে পড়ল আর অনেক প্রেয়ারস্ ফ্ল্যাগ। নেপালি ভাষায় পোখরি মানে পুকুর। এই পুকুরের জল কালো রঙের, তাই এজায়গার নাম শুনেছি 'কালাপোখরি'। আজ আমরা থাকব 'কালাপোখরির পান্ডিম লজে'।

আজকের রাতটা একটু ঘুমোতে পারলাম। আগের দুরাত না ঘুমিয়ে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। পরদিন চারপাশটা ঘুরে দেখে নিলাম। তারপর যাত্রা শুরু হল সান্দাকফুর দিকে। আজ রাস্তা বেশ কঠিন তবে দীর্ঘ নয়। চার কিমি দুরে বিকেভঞ্জন অবধি রাস্তা বেশ ভাল। তারপর থেকে শুরু হচ্ছে দুরুহ চড়াই। তবে পথটা ভীষণ সুন্দর। ধীরে ধীরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হচ্ছে। নানা ধরণের গুরাশ,পাইন,ফার দৃশ্যমান হচ্ছে। যেতে যেতে আরও দুই বাঙ্গালির সাথে দেখা। তারাও সান্দাকফু যাচ্ছে। ৩কিমি চড়াই অতিক্রম করে সান্দাকফু এসে পৌঁছলাম। এখানে পৌঁছে বাকরূদ্ধ হয়ে গেলাম। এখন আমি পশ্চিমবঙ্গের সর্ব্বোচ্চ স্থানে দাঁড়িয়ে আছি। এই সেই জায়গা যেখান থেকে একমাত্র এভারেষ্ট,কাঞ্চনজঙ্ঘা,লোটসে,পান্ডিম একসাথে এতগুলো শৃঙ্গ দেখা যায়। এখানে থাকার জায়গা বেশ কয়েকটি আছে। আমরা আজ থাকব 'শেরপা শ্যালেতে'। এখন আকাশ মেঘলা, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ হঠাৎ মেঘ সরে গিয়ে সূর্য্য উঁকি মারছে। তখন দেবুদা আমাদের শৃঙ্গগুলির অবস্থান দেখিয়ে দিল। আমি তো পরের দিন ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সেদিনের সন্ধ্যাটা গল্পে গানে বেশ কেটে গেল।পরদিন তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে বাইরে এলাম। বাইরে ভীষণ ঠান্ডা আর তেমনি হাওয়া। ধীরে ধীরে আকাশে হোলি খেলা শুরু হল। একে একে এভারেষ্ট,কাঞ্চনজঙ্ঘা,লোটসে আলোকছটায় রঞ্জিত হল। সে এক অতুলনীয় দৃশ্য, যা ভাষায় প্রকাশ করার দক্ষতা আমার নেই। নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। অনেক ভাললাগা নিয়ে অবশেষে সান্দাকফুকে বিদায় জানালাম।

আজ ১৭ কিমি নীচে নামতে হবে। এই রাস্তাও ভীষণ সুন্দর। গুরাশ আর পাইনের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আর মাঝে মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দিচ্ছে। হঠাৎ গাছের নীচে বরফ দেখলাম। বেশ কিছুটা যাবার পরে অনেকগুলো ইয়াক দেখতে পেলাম। দূর থেকেই তাদের ছবি নেওয়া হল। এইভাবে আমরা পুরো রাস্তাটা কখন হেঁটে ফেল্লাম, পৌঁছে গেলাম মোল্লের গেষ্টহাউসে। আমিতো জায়গাটা দেখেই বাকরূদ্ধ হয়ে গেছি। বুদ্ধদেব গুহ'র উপন্যাসে পড়া বনবাংলোয় যেন পৌঁছে গেছি। গরম গরম সুপ খেয়ে পথের ক্লান্তি দুর হয়ে গেল। এখানে জলের খুব কষ্ট, আর বিদ্যুতও নেই। দুপুরে সরষে সাক, ডাল আর ভাত খেয়ে নিলাম পেট পুরে। অনেকেই আজ ক্লান্ত, যে যার বিছানায় তাই গড়িয়ে নিচ্ছে। রাত্রে খিচুড়ি খাবার পর তুমুল বৃষ্টি শুরু হল। প্রথমে কিছুক্ষণ বরফ বৃষ্টিও হল। ছুটে দেখতে গেলাম বাইরে, ঘন অন্ধকারে টর্চ নিয়ে। আমি যায়গাটার প্রেমে পড়ে গেছি। আর দুটো দিন এখানে কাটিয়ে গেলে মন্দ হয়না, কিন্তু তা যে হবার নয়।

আজ যাব "শ্রীখোলা"। আজ আমাদের সাথে গাড়ি নেই। সঙ্গে দুজন পোর্টার আর ঘোড়া আছে। তাই আজ আমার পিঠে স্যাক রয়েছে, তাই সত্যিকারের ট্রেকার মনে হচ্ছে নিজেকে। পথে যেতে যেতে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে শেষবারের মত ভালভাবে দেখে নিলাম। আর দেখা যাবে না। আমাদের গাইড যে পথ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছেনা এ রাস্তা কোনদিন শেষ হবে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলেছি, এই জঙ্গলই নাকি হিমালয়ান রেড পান্ডার বাসস্থান। খুব সাবধানে হাঁটছি ,খাড়া পাহাড়ী পথে ওঠার চেয়ে নামা বেশি কষ্টকর। প্রতি মুহুর্তেই মনে হচ্ছে পড়ে যাব। হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছে কখন একটা গ্রাম দেখা যাবে, কিন্তু আশে পাশে কোন জনবসতির দেখা নেই। দীর্ঘ উতরাই পেরিয়ে একটি পাহাড়ি গ্রামে এসে পৌঁছলাম। গ্রামের নাম 'বিজগ্রাম'। ঝরনার মিষ্টি জল পান করে আবার চলা শুরু হল। মটর ও নানাবিধ সব্জি ক্ষেতের পাশ দিয়ে অনেকটা হাঁটার পর নদীর কল কল শব্দ কানে এল। আমরা শ্রীখোলা পৌঁছে গেলাম মনে হচ্ছে। যখন আমরা হোটেল শোভরাজে পৌঁছলাম, ততক্ষণে দলের অনেকেই পৌঁছে গেছে। নেপালি ভাষায় খোলা মানে নদী, আর এই নদীর নাম শ্রী বা ছিরি। সেইথেকেই এই যায়গার নাম হয়েছে শ্রীখোলা। দুচারদিন ছুটি কাটানোর জন্য শ্রীখোলা একটি আদর্শ যায়গা। সারাদিন নদীর জলে পা ডুবিয়ে কোথা দিয়ে কেটে গেল। রাতে তো দারুণ খাওয়া হল। ভাত,ডাল,সব্জি সাথে দিশী মুরগির ঝোল।

আমাদের সান্দাকফু ভ্রমণ শেষ। পরদিন সকালে রিম্বিক হয়ে আমরা দার্জ্জিলিং চলে গেলাম। যাবার সময় মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। সাতদিন একসঙ্গে থেকেছি, ঘুরেছি, এখন সেই স্মৃতি নিয়ে দার্জ্জিলিং ঘুরে আমরা কলকাতা ফিরব।

নীচের স্লাইড শো'তে কিছু ছবি দেওয়া হল :
Photobucket





লেখিকা : ঝুমা মুখার্জী
৩১শে জুলাই, ২০০৮
মথুরা, ইন্ডিয়া