Thursday, August 14, 2008

৩ দিনের প্যাকেজ ট্যুর: কুন্নুর-উটি-কোয়েম্বাটুর :

কুন্নুর :
উটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও মনোরম। কিন্তু এখন প্রচন্ড ঘিঞ্জি হয়ে যাওয়ার আমরা ঠিক করলাম উটি’তে না থেকে কুন্নুর এ থাকব। উটি থেকে কুন্নুর মাত্র ১৯ কিমি দুরে, কিন্তু উটির মতো ভীড় এখানে নেই। কুন্নুর এককথায় বলতে গেলে নীলগিরি পর্বতমালার ওপর একটা ছোট্ট বাগিচা শহর (plantation town) চারিদিকে সবুজ, আর ঠান্ডা পরিবেশ সফরের ক্লান্তিকে খুব সহজেই ভুলিয়ে দেয়। শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে পালিয়ে কটা’দিন খুব আনন্দে কাটিয়ে এলাম আমরা। অনেকরকম ভাবে যাওয়া যায় এখানে, তবে আমরা ব্যাঙ্গালোর থেকে কোয়েম্বাটুর চলে গেলাম, সেখান থেকে আরেক’টা পাহাড়ি রাস্তা, ১৪’টা হেয়ার পিন বাঁক, সুন্দর সুন্দর জলপ্রপাত, অদ্ভুত সুন্দর সব শিলা (rock), আর মেঘের ফাঁক ফেকে উঁকি দেওয়া পাহাড়ের হাতছানি আমাদের দু’ঘন্টার জার্নিকে আরো সুন্দর করে দিলো। বু ঝতেই পারলাম না কখন সমুদ্রতল থেকে ১৯৩৯ মিটার ওপরে উঠে এসেছি।

কিভাবে যাবে:
ব্যাঙ্গালোর থেকে সড়কপথে :
ব্যাঙ্গলোর---মাইসোর---বান্দপুর(ফরেস্ট)---গাদালুর—উটি---কুন্নুর
তামিলনাড়ু’র অন্যান্য শহর থেকেও সড়কপথে (by road) আসা যায়।
ট্রেন :
সবচেয়ে কাছের ট্রেন স্টেশন হল কোয়েম্বাটুর,সেখান থেকে গাড়ী ড্রাইভ করে ২ ঘন্টা(হোটেলে আগে থেকে বলে রাখলে ওরা ব্যবস্থা করে দেয়)
আকাশপথে(by air):
সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট হল কোয়েম্বাটুর।

থাকার ব্যবস্থা:
সব রকমের হোটেল এখানে রয়েছে- আয়ুর্বেদিক স্পা,রিসর্ট,স্টার হোটেল থেকে ছোট মটেল(motels) ৬০০ টাকা থেকে ৯০০০ টাকা (প্রতিদিন)। নিম্ন (lower) কুন্নুর খুব ঘিঞ্জি তাই উচ্চ(upper )কুন্নুরেই থাকা ভালো।

দেখার জায়গা:
প্রথম দিন :
চা বাগিচা, সিমস্ (sim’s) পার্ক, ল্যাম্ব রক (lamb rock), ডলফিন নোজ(dolphine nose), স্লিপিং লেডি রক(sleeping lady rock), ক্যানিং সীট(canning seat), সেন্ট ক্যাথারাইন ফলস্ (St.Catharine falls),ল ফলস্ (law falls)। এছাড়া চা ফ্যাক্টরীও যাওয়া যায়, যদি সপ্তাহের মাঝে যাওয়া হয়।
অনেক ট্রাভেল এজেন্ট রয়েছে এই সমস্ত জায়গা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য।তবে ভালো হয় যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করবে তাদেরকেই বললে।

শপিং:
এখানে টোডা উপজাতিদের তৈরী গয়না, কাপড়ে সূতোর কাজ, অ্যান্টিক আসবাবপত্র, নানা ধরনের সুগন্ধি তেল (ইউক্যালিপটাস ওয়েল, ক্লোভ ওয়েল), ভালো মশলাপাতি (এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ), মধু, একটু ভিন্ন ধরনের মোমবাতি পাওয়া যায়। আর খুব ভালো নানা ধরনের চা (মশলা চা, চকোলেট চা) পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় দিন:

উটি:
কুন্নুর থেকে পরের দিন জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম উটি দেখার জন্য। কুন্নুর থেকে উটি মাত্র ১৯ কিমি, যাওয়ার পথ খুব সুন্দর ঘন সবুজে ঢাকা। হঠাৎ হঠাং মেঘের দল সব ঝাঁপসা করে দিয়ে যাচ্ছিল। ৪৫ মিনিটি পৌঁছে গেলাম উটি। উটির উচ্চতা ২২৪০ মিটার। যদি হাতে সময় থাকে তাহলে ট্রয় ট্রেন-এও যাওয়া যায়, ভীষণ সুন্দর যাওয়ার পথ। ২০৮ টি কার্ভ, ১৬ টা ট্যানেল, ২৫০ টা ছোট ব্রিজ হওয়া ছুঁক ছুঁক স্টীম ইঞ্জিনের সময় লাগে ২ ঘন্টা।

দেখার জায়গা:
উটি’তে দেখার মত অনেক জায়গা আছে আছে তার মধ্যে যে গুলো খুব জনপ্রিয় সে গুলো হল বোটানিক্যাল গার্ডেন, রোজ গার্ডেন,থ্রেড (thread) গার্ডেন,স্টোন হাউস, মিউজিয়াম, বোট ক্লাব, উটি লেক দোদাবেতা শৃঙ্গ।

অ্যাকটিভিটি:
উটি লেক এ বোটিং করার ব্যবস্থা আছে। আর যদি শুধু উটি’তে যাও তবে মাছ ধরার (fishing) ব্যবস্থা আছে। গল্ফ ক্লাব এ একদিন গল্ফ খেলতে পারো। তবে সমস্ত রকম অনুমতির জন্য তামিলনাড়ু পর্যটন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

শপিং:
মোটামুটি এক ধরনের জিনিস পাওয়া যায় কুন্নু্ আর উটিতে । তবে উটিতে হোম মেড চকোলেট খুব ভালো পাওয়া যায়।

তৃতীয় দিন:

কোয়েম্বাটুর:
প্রাতঃরাশ সেরে আমরা হোটেল থেকে চেক আউট করে বেড়িয়ে পড়লাম কোয়েম্বাটুর এর উদ্দেশ্যে। সেই দিন’ই রাত্রিবেলা ব্যাঙ্গালোর ফেরার ট্রেন ধরব, তাই ঠিক হল আজ আমরা কোয়েম্বাটুর দেখবো সারাদিন ।

দেখার জায়গা:
ফুট হিলস্’ এই মাটুপালায়াম শহর আর কাছেই ছিলো আরুলমিগু আরঙ্গানাথা স্বামী থিরুকইল মন্দির। সেটা দেখলাম, খুব সুন্দর মন্দির। এখানে সবাই বলে এই শিব লিঙ্গ প্রতি বছর একটু একটু করে বড় হয়।
এরপর গেলাম মুরুধে মালাই মন্দিরে, এটি মুরুগন দেবতার মন্দির। পাহাড়ের ওপর ছোট ও খুব সুন্দর মন্দির। আর পাহাড়ের ওপর থেকে শহর’টা দেখেও খুব সুন্দর লাগে। তারপর গেলাম কোয়েম্বাটুর শহর থেকে ৭ কিমি দূরে পেরুর পাট্টেস্বরা মন্দির। খুব সুন্দর বিশাল লিঙ্গ ও স্থাপত্য দেখে মন ভরে যায়। আরও কিছু মন্দির আছে হাতে সময় থাকলে দেখতে পারো। এরপর শহরের ভেতর মিনি চিড়িয়াখানা দেখলাম।

শপিং:
এখানে সব রকমের টেক্সটাইল খুব সস্তা তাই মনের ইচ্ছা মতো জামাকাপড় কেনা যায়।আর যদি বাজেট বেশী থাকে তবে খুব সুন্দর ডিজাইনের (দক্ষিণ ভারতীয়) সোনার গয়না পাওয়া যায় এখানে ।

বাজেট:
ট্রেন ভাড়া+হোটেল ভাড়া(আমরা মিডিয়াম হোটেল নিয়েছিলাম ভাড়া ছিল ২২০০টাকা প্রাতঃরাশ সহ)+ট্যাক্সি ভাড়া।
এই সব নিয়ে মোট ১২৭০০ টাকা খরচ হয়েছিলো।

ট্রাভেল টিপস্;
বছরের যে কোনো সময়ই এখানে আসা যায় তবে জুন-জুলাই-এখানে বৃষ্টি হয় তাই ওই সময়’টা বাদ দিয়ে যাওয়ায় ভালো। বাকি সময় এখানকার আবহাওয়া বেশ ভালো থাকে। কুন্নুর ও উটি’তে দিন ও রাত্রের তাপমাত্রার মধ্যে অনেকটা পার্থক্য থাকে তাই ট্রাভেল ব্যাগে গরম জামাকাপড়, ছাতা, সান ব্লক লোশন আর কিছু প্রয়োজনীয় মেডিসিন রাখা দরকার। হোটেল বুকিং আগে থেকে করে রাখলে ভালো।





লেখিকা : সুপর্না ভট্টাচার্য্য
২০শে জুলাই, ২০০৮
ব্যাঙ্গালোর, ইন্ডিয়া

5 comments:

শারদীয়া পুস্পাঞ্জলি said...

darun bornona, ar kajer information.
bhalo likhechho Suparna.

Asim said...

Priya suparNaa,
Ei bibhaage aaro dujaner mata ei bhramaner barnanaa mane daag kaaTe ni. Ei sab tathya neT ebang bibhinna guide boi theke sahajei paaoyaa jaabe. Tomaader anurodh kari nijeder chokh diye dekhaa bhraman kaahinee tomaader aabeg o anubhooti diye lekhaa. Ete kare ei bibhaager maano baariye tulte paarbe. Chhabigulo abashyai bhaalo hayechhe.

Unknown said...

Suparna,

Aami Mettupalayam er graame 6 maas chhilaam...aar jeje jaaygaa r baarnanaa diyechho saab jaygay ami gechhi...tomaar lekhaa sei smriti ke aabaar notun kore jaagiye tullo

jhum said...

suparna khub informative lekha. sotti khub subidhe hobe tomar dewa somosto details gulote jara ei jaiga gulote jabe tader jonne. khub sundor kore tumi somosto information diyecho.

Bidyut said...

Kunnoor to otti jaoar train er name ta ki.