
এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবার সময় অনেক কমে গেছে। এখন আর ২০-২২দিনের ট্যুরের কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তবুও পুরো সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর সপ্তাহান্তে আমাদের মনে হয় কোথাও ঘুরে আসলে বেশ হয়।
ব্যাঙ্গালোর থেকে একদিনের ট্যুরে যাওয়ার মতো অনেকগুলো জায়গা রয়েছে। মাইসোর, তিরুপতি, ও শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত এই তিনটি জায়গা আমরা অনায়াসে এক একটি সপ্তাহান্তে ঘুরে আসতে পারি। কিভাবে যেতে হবে তার সম্পর্কে যদি একটা ধারণা আগে থেকেই থাকে, তবে আমাদের সকলেরই একটু সুবিধা হয়। এই সংখ্যায় আমি আপনাদের সেরকম কিছু জায়গার তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মাইসোর :-
মাইসোর শহরটি আমাদের সকলের কাছেই বেশ পরিচিত। মাইসোরের নাম শুনলেই প্রথম যার নাম মনে পরে তিনি হলেন টিপু সুলতান। ব্যাঙ্গালোর থেকে মাইসোরের দূরত্ব ১৩৬ কিমি। মাইসোর এ যা যা দেখার আছে তা হল মাইসোর প্যালেস, বৃন্দাবন গার্ডেন, চামুন্ডা পাহাড় ও টিপুর রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনম।
কখন ও কীভাবে যাবেন: প্রথমে ব্যাঙ্গালোর থেকে
মাইসোর, বাসে চলে যেতে পারেন । তারপর ওখানে গিয়ে ঘোরার আয়োজন করা যায়। বাস স্ট্যান্ড-এই অনেক এজেন্ট পেয়ে যাবেন। যারা ঘোরানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। তবে খুব ভালো হয় যদি আপনারা একটা গাড়ী ভাড়া করে চলে যান। আর রবিবার দেখে গেলে খুব ভালো হয়। কারণ, রবিবার ও জাতীয় ছুটির দিনেই একমাএ প্যালেসের সমস্ত লাইট সন্ধ্যে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত জনসাধারনের জন্য জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।গাড়ী নিয়ে গেলে সকাল ৯টার মধ্যে ব্যাঙ্গালোর থেকে বেড়িয়ে গেলে ১ টার মধ্যে মাইসোর পৌঁছে যাবেন । যাওয়ার পথেই শ্রীরঙ্গপত্তনম পড়বে, তাই ওটা তখনই ঘুরে নেওয়া ভালো। যদি সময় কম থাকে না ঘুরতেও পারেন, কারণ ওখানে ইংরেজরা সব ধ্বংস করে দিয়েছে, তাই ধ্বংসস্তুপ ছাড়া তেমন কিছু দেখার নেই। তারপর মাইসোর এ পৌঁছে কোথাও দ্বিপ্রাহরিক আহার সেরে চামুন্ডা পাহাড় এ চলে যেতে পারেন। ওখান থেকে পুরো শহরটা দেখা যায়। চামুন্ডা পাহাড়ে চামু্ন্ডা দেবীর মন্দির আছে। ওখান থেকে মাইসোর প্যালেস চলে যেতে পারেন। এরপরের দেখার জায়গা বৃন্দাবন গার্ডেন।সেখানে আছে কৃষ্ণসাগর ড্যাম্প। আর সন্ধে ৭টা থেকে ৭.১৫ একটা fountain show হয়। যদি ওটা দেখতে চান, তাহলে প্যালেসের লাইট নিভে যেতে পারে । তাই যদি প্যালেসের লাইট দেখে বৃন্দাবন গার্ডেনে যাওয়া যায় তাহলে ভালো হয়। আর একটি fountain show সন্ধ্যে ৭.৩০টা থেকে ৭.৪৫ পর্য্যন্ত হয়। তারপর ৮টায় মাইসোর থেকে বেড়িয়ে রাত ১১ টার মধ্যে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে যাবেন ।
খরচ হবে কেমন: বাস ভাড়া: জনপ্রতি ৪০০ টাকা (এ.সি ভলভো) (যাতায়াত) ও জনপ্রতি ১৫০ টাকা (নন এ.সি ভলভো) (যাতায়াত) খরচ হবে। মাইসোরে ঘোরার প্যাকেজ জনপ্রতি১০০ থেকে ২০০টাকা (প্রবেশ মূল্য ব্যতীত) গাড়ী করে গেলে ছোট গাড়ী কিমি পিছু ৬টাকা (নন এ.সি) ও কিমি পিছু ৭ টাকা (এ.সি)। আর ড্রাইভারের ২০০ টাকা।
তাই সব মিলিয়ে গাড়ী করে গেলে ২২০০ (নন এ.সি) ও ২৫০০ (এ.সি) টাকা খরচ হবে ।
মাইসোর প্যালেসে প্রবেশ মূল্য: জনপ্রতি ১৫ টাকা। ক্যামেরা জমা রখতে হয়, তার জন্য ক্যামেরা পিছু ৫ টাকা।
বৃন্দাবন গার্ডেনের প্রবেশ মূল্য: জনপ্রতি ১৫ টাকা। ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে দেয় কিন্তু স্টীল ক্যামেরার জন্য ৫০ টাকা ও ভিডিও ক্যামেরার জন্য ১০০ টাকা মুল্য নির্ধারিত।
তাহলে আর দেরী কেন? বেড়িয়ে পড়ুন আজই।
তিরুপতি বালাজী মন্দির: ব্যাঙ্গালোর থেকে তিরুপতির দূরত্ব ২৫০ কিমির মতো। তিরুপতি বালাজী বিগ্রহ ভারতবর্ষের জাগ্রত বিগ্রহের মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন প্রায় কয়েক লাখ মানুষ তাদের মনষ্কামনা জানাতে এখানে আসেন। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিয়ে বিগ্রহ দর্শনের সুযোগ পাওয়া যায়।
কীভাবে ও কখন যাবেন: তিরুপতি যাওয়ার সবথেকে ভালো উপায় হলো প্যাকেজ ট্যুর।প্যাকেজ ট্যুর এ গেলে ওদেরই দায়িত্ব থাকে বিগ্রহ দর্শন করানোর।
শনিবার যদি যেতে চান তাহলে অন্তত ১ সপ্তাহ আগে ট্রাভেল এজেন্সী বুকিং করে ফেলতে হয়। সাধারণতঃ শনিবার রাত ৮টায় ব্যাঙ্গালোর থেকে বাস ছাড়ে আর সকালে তিরুপতি(তিরুমালা)পৌঁছে যায়। ওখানে ওরাই বিশ্রাম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য রুম দিয়ে থাকেন এবং প্রাতঃরাশের ব্যবস্থা করেন। তারপর মন্দির দর্শনের জন্য নিয়ে যান, এখানে প্রায় ৫-৬ঘন্টা লেগে যায় মন্দির দর্শনের জন্য। তারপর ব্যাঙ্গালোরে ফিরে আসে সন্ধ্যে ৭টা মধ্যে। গাড়ী করে গেলে শনিবার সকালে বেড়িয়ে যাবেন। সোজা তিরুমালা গিয়ে পরের দিনের মন্দির দর্শনের টিকিট কেটে নেবেন। তারপর তিরুপতিতে থেকে সেদিন রাতটা কাটিয়ে পরের দিন বিগ্রহ দর্শন করে দুপুর ২টোর মধ্যে ব্যাঙ্গালোর ফিরে আসতে পারেন।খরচ পড়বে: প্যাকেজ ট্যুর: জনপ্রতি ৭০০ টাকা ( নন এ.সি ভলভো), ও ৯০০ থেকে ১০০০টাকা (এ.সি)। প্রাতঃরাশ ও মধ্যাহৃভোজসহ। গাড়ীতে গেলে: কিমি পিছু ৬টাকা (নন এ.সি) ও ৭ টাকা (এ.সি)। হোটেল খরচ ৬০০ থেকে ১০০০।আর বিগ্রহ দেখার টিকিট মূল্য ৫০, ১০০, ৪০০, ৫০০, ৭০০টাকা।
যদি ভালোভাবে মন্দির দর্শন করতে চান তাহলে বলব সপ্তাহান্তে না গিয়ে সপ্তাহের মাঝে যাওয়া ভালো।

শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত: ব্যাঙ্গালোর থেকে ১২৫ কিমি দূরেই রয়েছে কাবেরী নদীর ওপর অবস্থিত শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত।বর্ষায় এই জলপ্রপাতের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। একদিনের ছুটিতে এইরকম জায়গার বিকল্প হতে পারে না ।
কীভাবে ও কখন যাবেন: যেকোন জলপ্রপাতেই বর্ষাকালে যাওয়া উচিৎ, কারণ বর্ষাকালেই দেখা যায় জলপ্রপাতের আসল রূপ। তাই শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো জুলাই এর শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্য্যন্ত।
ব্যাঙ্গালোর থেকে সকালে বেড়িয়ে সন্ধ্যার মধ্যে আবার ফিরে আসা যায়। গাড়ী নিয়ে সকাল ৮ টায় বেড়োলে ১১টার মধ্যে ওখানে পৌঁছানো যাবে।ওখানে কাছাকাছি দুটো জলপ্রপাত আছে ১০কিমি ব্যবধানে বারাচুক্কি ও গগনাচুক্কি। এখানে গেলে বাড়ী থেকে খাবার নিয়ে যাওয়ায় ভালো কারণ ওখানে মধ্যাহ্নভোজন এর কোনো ব্যবস্থা নেই। গগণাচুক্কি দেখে তারপর বারাচুক্কি যাওয়া ভালো। বারাচুক্কিতে জলপ্রপাতের একদম নীচ পর্য্যন্ত যাওয়া যায়। তাই ওখানে গিয়ে খাবার নিয়ে নীচে নেমে যাবেন। নীচে বোটিং এর’ও ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি জলপ্রপাতে স্নান করতে চান তাও করতে পারেন। নামার সময় যতটা তাড়াতাড়ি নামা গেছিলো ওঠার সময় বেশ কষ্ট হতে পারে, তাই আস্তে আস্তে বিশ্রাম নিয়ে ওঠাই ভালো।
বারাচুক্কি থেকে ৪০ কিমি দূরত্বে তালকাদ নামে আর একটি জায়গা আছে। সেখানেও যেতে পারেন। জায়গাটি নদীর তীরে অবস্থিত ও এখানে পাথরের কাজের মন্দির গুলো অতুলনীয় । এসব দেখে এবার বাড়ী ফেরার পালা। সারাদিন সমস্ত কিছু দেখে সন্ধ্যের মধ্যেই ব্যাঙ্গালোর ফিরে আসতে পারবেন।
নীচের স্লাইড শো'তে কিছু ছবি দেওয়া হল:

ছবি সৌজন্য: ইন্টারনেট ও অর্পিতা
লেখিকা : অর্পিতা পান্ডা(রায়)
১২ই জুলাই, ২০০৮
ব্যাঙ্গালোর, ইন্ডিয়া।


















